ফাইল ছবি।
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে মুষলপর্ব। দলের একাধিক জেলা নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, জোট করার আগে কোনওরকম আলোচনা হয়নি। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম নিজেদের মতো করে আসন সমঝোতা করে নিয়েছেন। এখন কংগ্রেস কর্মীদের উপর সেই জোট ‘চাপিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা হচ্ছে। জেলা সভাপতিদের ক্ষোভের মূল কারণ, উত্তরবঙ্গের তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে অনেক কম আসনে লড়ছে কংগ্রেস। জেলা নেতাদের অভিযোগ, জোট আলোচনার সময় দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে দুয়োরানির মতো আচরণ করা হয়েছে। তবে ক্ষোভ উত্তরবঙ্গেও রয়েছে।
সূত্রের খবর, মালদহ জেলা কংগ্রেসের (Congress) সভাপতি আবু হাসেম খান চৌধুরী ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। তাঁর প্রস্তাবিত নাম ভূপেন হালদার মালদহ উত্তরের জন্য অনুমোদন পায়নি। ভূপেন জানিয়েছেন, “জেলা নেতৃত্ব নাম পাঠিয়েছিল শুনেছি। এখন যিনি প্রার্থী হয়েছেন তাকে নিশ্চয়ই দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব অনুমোদন দিয়েছেন। প্রাথমিক অভিমান থাকলেও দলের হয়ে প্রচারেও নামব।” প্রদেশ কংগ্রেস অবশ্য বলছে, মালদহ উত্তর কেন্দ্রে সংখ্যালঘু প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাই আর এক প্রাক্তন বিধায়ক মুস্তাক আলমকে প্রার্থী করা হয়েছে ওই কেন্দ্র।
তবে উত্তরবঙ্গের থেকে ক্ষোভের আগুন অনেক বেশি জোরাল দক্ষিণবঙ্গে। উত্তর ২৪ পরগনা শহর জেলা সভাপতি তাপস মজুমদার নিজের জেলার জন্য আরও আসন দাবি করেছিলেন। বনগাঁ, বসিরহাট, বারাকপুরের মতো কিছু আসনকে বিকল্প হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু বারাকপুর ছাড়া সম্ভবত আর কোনও আসন মিলছে না। এই অবস্থায় তাঁকে শান্ত করতে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজে ফোন করেন। প্রসঙ্গত, এই জেলা থেকে বারাকপুর আসনে লড়তে চেয়েছিলেন যুব কংগ্রেস সভাপতি আজাহার মল্লিক। সেটি না হলে বর্ধমানের কোনও আসনেও লড়তে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। কিন্তু বারাকপুর আসনে সংখ্যালঘু ভোট তেমন নেই বলে আজহারকে নিরস্ত করা হয়। বর্ধমানের কোনও আসনের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ মিললেও সেক্ষেত্রেও তাঁকে নিরস্ত করার চেষ্টা হয়েছে ২৬-এর বিধানসভার কোনও আসন থেকে তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা গ্রামীণ সভাপতি জয়ন্ত দাস বলেছেন, “দক্ষিণবঙ্গে আসন নিয়ে ভাবনাচিন্তা হলে এদিকের কর্মীদের মনোবল বাড়ত। কী অবস্থায় কর্মীরা রয়েছে, সেটা কর্মীরাই জানে।” এই জেলা থেকে ডায়মন্ডহারবার আসন নিয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে দলের মুখপাত্র সৌম্য আইচের নাম চর্চায় রয়েছে। অন্যদিকে, যাদবপুর আসনে আগেরবার বিকাশ ভট্টাচার্য জোট প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁকে সমর্থন দেয় কংগ্রেস। মিলিত ভোট শতাংশ হয় ২১%। সেখানে সিপিএম বিগত বিধানসভায় ৫.৬% ভোট পেয়েছিল, কংগ্রেস পায় ৫%। সামান্য ফারাক ছিল। তারপরও কংগ্রেসের কর্মীদের কথা না ভেবে আসন ভাগ নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সিপিএমকে। এই নিয়ে ক্ষোভ দক্ষিণ ২৪ পরগনা নেতৃত্বের।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের কথায়, “কার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, কে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, বোঝা যাচ্ছে না। আমাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অনেক কিছুই আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তার উলটো দেখা যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গ অনেকগুলো আসন পেল। আমরা বঞ্চিত। রায়গঞ্জ আসনে কংগ্রেস আগেরবার চতুর্থ আসন পেয়েছিল। তার পরও আলি ইমরান রামজকে প্রদেশ সভাপতি প্রার্থী করার কথা দিয়েছিলেন বলে তাকে টিকিট দেওয়া হল।” প্রদেশ সভাপতি ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলছে অনেকেই। অভিযোগ, তারাই দলের সংগঠনের সঙ্গে ছেলেখেলা করছে। এ রাজ্যে দলের সাংগঠনিক ভিত নষ্ট করছে। এই বিক্ষুব্ধ নেতারা জোট প্রসঙ্গে মনে করছেন, সিপিএম এর ভোট অনেকাংশেই কংগ্রেস পাবে না। বরং তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলে সেখানে তৃণমূলের বিক্ষব্ধু ভোট কংগ্রেস পেত। তাহলে তৃণমূল ভোট না পেলেও কংগ্রেস ভোট টেনে জোট প্রার্থীকে জেতাতে পারত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.