ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ২১ তারিখের পর থেকেই বিধি শিথিল হতে শুরু করেছিল। তাতে আশা খানিকটা জেগেছিল। কিন্তু আমফান দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশ বিধস্ত করে দেওয়ার পর সেসব আলোচনা থেকে সরে এসেছিল সবাই। এর মধ্যেই বাজারে আম উঠেছে। মুরগির মাংসের দাম চড়েছে। গত দু-তিনদিনে বাজারের যা খবর এসেছে তাতে খেতের পর খেত উজাড় হয়ে যাওয়ায় ফল সবজিতে আগুনের আঁচ লাগতে শুরু করেছে। কাল বাদে পরশু জামাই ষষ্ঠী। লকডাউন শিথিল হওয়ার মরশুমে বাঙালির আরেক বড় উৎসব। নমঃ নমঃ করে হলেও যেসব জায়গায় ক্ষতির পরিমাণ কম, সেখানে জামাইয়ের কপালে একটু আশীর্বাদ জুটবেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, জামাইয়ের শ্বশুরবাড়ি যাওয়া আটকাবে না তো!!
সরকারি বিধি অনুযায়ী কনটেনমেন্ট ‘এ’ জোনে কেউ ঢুকতে পারবেন না। ‘বি’ জোনে থাকবে কিছু নিয়ন্ত্রণ। ‘সি’ জোন নির্ঝঞ্ঝাট। প্রায় সবটাই ছাড়। চতুর্থ দফা লকডাউন চলছে এই সব বিধি ও ছাড় নিয়েই। ২৭ তারিখ, অর্থাৎ বুধবার থেকে গণপরিবহণের কিছু কিছু মিলতেও পারে। খুলে গিয়েছে ছোট-বড়-মাঝারি দোকান। সেলুন-বিউটি পার্লারও। আন্তঃর্জেলা বাস পরিষেবা স্বাভাবিক করার অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে এখন বড় বিপদ লোডশেডিং আর খাবার জলের অভাব। তার যদি ৬০-৭০ শতাংশ ঠিক হয়েও যায়, তার পরও জামাইকে শশুরবাড়ি পৌঁছতে হলে পেরোতে হবে একাধিক হার্ডল। বাস চালু হলেও, কিংবা ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলেও রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ যাতায়াত করেন ট্রেনেই। তা এখন অমিল। ভরসা কিছু অটো রিকশা। অথবা বাস যদি কিছু চলে। এর পর রাস্তায় বেরিয়ে যদি নিয়ম কেউ ভাঙেন ‘জামাই মানুষ’ বলে কি ছাড় পাবেন?
অতিমারির নিয়ম ভাঙলে এই মুহূর্তে কড়াধারা প্রয়োগে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। জামাই যদি আবার রাস্তায় বেরিয়ে নিয়ম ভাঙে? ডিসি ট্রাফিক রূপেশ কুমার জানিয়েছেন, “সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটাই আমরা নেব।” এখন যা পরিস্থিতি তাতে, দুপুরের পর থেকেই সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বিকেলের মধ্যে রাস্তা ফাঁকা। সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে কারফিউ জারি হচ্ছে। রাজ্য সরকারও বলেছে, নিয়ম না মানলে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেবে। ফলে ষষ্ঠীর রসনা তৃপ্তি করতে গিয়ে নিয়ম ভাঙলে জেল-জরিমানা-হাজতবাস হতে পারে স্বাভাবিকভাবেই। অতঃকিম? এই দিন হাতছাড়া হলে তার আর কি কোনও বিকল্প আছে? নিত্যপুজোর সঙ্গে জড়িত এমন এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ পুরোহিত শেখর চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “যা নিয়ম করার তা জামাইষষ্ঠীর দিনই করতে হয়। এ বছর হল না মানে, তা আর হলই না। এই আচারের কোনও বিকল্প দিনক্ষণ নেই।”
শেষ পর্বে সব হার্ডল পেরিয়ে যদি কেউ শ্বশুরবাড়ি পৌঁছেও যান, মানসিক দিক থেকে কোনও বাধা থাকবে না তো? আশীর্বাদ নিতে বা দিতে গিয়ে যদি উভয়পক্ষেরই মনটা খচখচ করে ওঠে? প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এই খবরও আসছে যে, জুন মাস শুরুর মুখেই বঙ্গ তথা গোটা দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়বে। এই অবস্থাতেও কি শাশুড়ি সস্নেহে তাঁর আদরের হাত জামাতার মাথায় রাখতে পারবেন? ডালায় সাজানো ফল মিষ্টি মুখের সামনে তুলে ধরতে হাত কাঁপবে না তো? কিংবা যদি জামাইয়ের মনে কোনও প্রশ্ন জাগে? জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. অভিজিৎ দাশগুপ্তর পরামর্শ, সামাজিক দূরত্বের নিয়ম কিছুটা মানলেই হবে। তাঁর কথায়, “একেবারে শুরুতেই ঘরে ঢুকে স্নান করে নিন। জামাকাপড় বদলে ফেলুন। আচার পালনের সময়টা শাশুড়ি আর জামাই দুজনেই মাস্ক পরে থাকুন। এইটুকু বিষয় এখন জীবনের নিত্যসঙ্গী।”
একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “এবারে মানুষের মধ্যে তেমন উৎসাহ হবে বলে মনে হয় না। তবু যদি হয়, তবে অবশ্যই সাবধানে খাওয়া-দাওয়া করুন। যাতে পেট ধরে ক্লিনিক বা হাসপাতালে না ছুটতে হয়। কারণ এখন কিন্তু সেসব সহজে পাবেন না।”
অলঙ্করণ: সুযোগ বন্দ্যোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.