গৌতম ব্রহ্ম: আগে বেওয়ারিশ লাশ সৎকার করা হত ধাপায়। কিন্তু বর্তমানে সেখানে করোনা রোগীদের মৃতদেহ সৎকার করা হচ্ছে। তার ফলে মিলছে না দাবিদারহীন দেহগুলি সৎকারের জায়গা। তাই সৎকারের জন্য এনআরএস হাসপাতাল থেকে ১৪টি দেহ গড়িয়া শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বুধবারের সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গড়িয়া মহাশ্মশান সংলগ্ন এলাকায় ছড়াল তীব্র চাঞ্চল্য। স্থানীয়দের দাবি, এই দেহগুলি করোনা রোগীদের। যদিও কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, বেওয়ারিশ লাশই দাহ করা জন্য ওই শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদিকে, আবার এই ভাইরাল ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে জবাব তলব করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
বুধবার দুপুরে কলকাতার পুরসভার একটি গাড়ি গড়িয়া মহাশ্মশান চত্বরে এসে পৌঁছয়। ওই গাড়িতে কমপক্ষে ১৪টি মৃতদেহ ছিল। ২টি পচাগলা দেহ গাড়ি থেকে নামিয়েও ফেলা হয়। ইতিমধ্যেই এলাকায় রটে যায় করোনা আক্রান্তদের দেহ সৎকার করতে নিয়ে আসা হয়েছে। গুজব কানে যাওয়ার পরই প্রতিবাদে বাড়ি থেকে স্থানীয়রা সকলেই বেরিয়ে পড়েন। শ্মশানের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা।
ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা এবং সিপিএম নেতা চয়ন ভট্টাচার্য। বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশের কাছেও খবর যায়। স্থানীয়দের বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। তবে কোনওভাবেই ওই দেহগুলি সৎকার করতে দেননি স্থানীয়রা। বিক্ষোভের জেরে দেহ আবারও গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। শ্মশান লাগোয়া এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় নেটদুনিয়ায়। তা নজরে আসে সকলেরই। তাতেও দেখা গিয়েছে মৃতদেহ টেনে নিয়ে যাওয়ার করুণ ছবি। বিক্ষোভের ঘটনার ভিডিও বর্তমানে নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ওই দেহগুলি এনআরএস হাসপাতাল থেকে গড়িয়া মহাশ্মশানে পাঠানো হয়েছিল বলেই জানিয়েছেন প্রিন্সিপাল শৈবাল মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এগুলি বেওয়ারিশ লাশ। কোনওটাই কোভিড আক্রান্তের দেহ নয়। এ বিষয়ে গুজব যারা রটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে নগরপাল অনুজ শর্মাকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। বেওয়ারিশ লাশের ভিডিও যারা ভাইরাল করে গুজব রটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজি জানিয়ে নগরপাল অনুজ শর্মাকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। কলকাতা পুরসভার দাবিও একইরকম। এগুলি বেওয়ারিশ লাশ বলেই দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। কারও উসকানিতেই স্থানীয়দের মধ্যে করোনায় মৃতদের দেহ দাহ করা নিয়ে গুজব রটে যায় বলেই জানান স্থানীয় তৃণমূল নেতা।
রাতের দিকে যদিও কলকাতা পুলিশের তরফে একটি টুইট করা হয়। ওই দেহগুলি যে করোনা আক্রান্ত রোগীর নয়, তা উল্লেখ করা হয় টুইটে। যে ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
West Bengal Health Department has informed that dead bodies were not of COVID patients, but were unclaimed/ unidentified bodies from Hospital Morgue. Legal action is being taken against persons spreading #FakeNews pic.twitter.com/ENcmUEgY3m
— Kolkata Police (@KolkataPolice) June 11, 2020
এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে ফের টুইট করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তিনি লেখেন, ,”অমানবিক, অবর্ণনীয় ছবি। শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে মৃতদেহ সৎকার করা উচিত।” স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে এ বিষয়ে জবাব তলবও করেন তিনি।
Anguished at disposal of dead bodies @MamataOfficial -with heartless indescribable insensitivity. Not sharing videos due to sensitivity.
Have sought an URGENT UPDATE @HomeSecretaryWB
In our society dead body is accorded highest respect-rituals r performed as per tradition(1/3)
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) June 11, 2020
ভাইরাল এই ভিডিওর প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে একহাত নেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “করোনা নিয়ে তথ্য গোপন করার জন্য এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে। নন্দীগ্রামে সিপিএম লাশ চুরি করছে। তৃণমূল এখন করোনা লাশ চুরি করেছে। আমাদের কাছে খবর আছে লাশ অ্যাসিড দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। যাঁরা মারা যাচ্ছেন তাঁদের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই সরকারের? মৃতদের প্রতি এত অবহেলা কেন? ”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.