সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শিশুকন্যাকে নৃশংস খুনের ঘটনা কেন্দ্র করে উত্তপ্ত তিলজলা, বন্ডেল গেট, পার্ক সার্কাস ও পিকনিক গার্ডেন। দফায় দফায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ স্থানীয়দের। বন্ডেল গেট, পার্ক সার্কাসে রেল অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। বাইকেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়।
তিলজলা কাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার সকালে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বন্ডেল গেট। সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ শুরু হয় পথ অবরোধ। অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং থানা ভাঙচুরে আটকদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয়রা। বুকে পোস্টার লাগিয়ে কয়েকজন বিক্ষোভকারী রাস্তায় বসে পড়েন। দিতে থাকন স্লোগান। আবার বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী পিকনিক গার্ডেন-হাওড়া রুটের একটি বাসের ছাদেও উঠে পড়েন। বন্ডেল গেটে অবরোধের জেরে গড়িয়াহাট ও বালিগঞ্জে ব্যাহত যানচলাচল। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের একপ্রস্থ তর্কাতর্কিও হয়।
এরপর বন্ডেল গেটে রেল অবরোধও করেন বিক্ষোভকারীরা। বালিগঞ্জ, পার্ক সার্কাসেও রেল অবরোধ হয়। তার জেরে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। ভোগান্তির শিকার হন নিত্যযাত্রীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশকর্মীরা কথা বলতে যান। অবরোধ হঠাতে গেলে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
পিকনিক গার্ডেনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুঁড়তে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। একটি পুলিশের গাড়ির ছাদে উঠে ভাঙচুর শুরু করেন এক বিক্ষোভকারীরা। ভেঙে দেওয়া হয় জানলার কাচ। পরে আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয় গাড়িটিতে। কিয়স্কেও তাণ্ডব চালানো হয়।
একটি বাইকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল। সেই গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়া হয়। বাধ্য হয়ে পালটা পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলেই অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে পালটা কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ।
তিলজলা এলাকার শ্রীধর রায় রোডে শিশুকন্যার পরিবার থাকে। রবিবার সকাল থেকে সাত বছরের শিশুকন্যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ক্রমে পরিবার ও প্রতিবেশীরা সব জায়গায় খুঁজতে শুরু করেন। কোথাও না পেয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ থানায় যান। পুলিশ আইন মেনে অপহরণের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, প্রথমে বাইকে করে পুলিশ টিম এলেও ভাল করে তদন্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের দাবিতে ওই অঞ্চলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে গিয়েই দেখা যায়, বাড়ির ভিতর প্রবেশ করছে শিশুকন্যা। ওই বহুতলের একতলায় রয়েছে একটি গেঞ্জি কারখানা। কারখানাটিতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু উদ্ধার হয়নি। যদিও পুলিশ জানতে পারে, কারখানার অনেক কর্মী বহুতলের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকেন।
পরে পুলিশ ওই বহুতলের প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে চিরুনি তল্লাশি চালায়। তিনতলায় অলোক কুমারের ফ্ল্যাটে একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখা যায়। যুবক প্রথমে বলার চেষ্টা করে সেখানে নিজস্ব জিনিসপত্র রয়েছে। কিন্তু বস্তায় হাত দিয়েই নরম কিছু অনুভব করেন পুলিশকর্মীরা। তার উপর বস্তাটি ভিজে দেখেও তাদের সন্দেহ হয়। তড়িঘড়ি সেটি খুলতেই বেরিয়ে পড়ে শিশুকন্যার দেহ। অভিযুক্ত খুনের স্বীকার করে। বাবা হওয়ার আশায় তান্ত্রিকের নির্দেশে সে ওই শিশুকে খুন করেছে বলেই জানায়। অভিযুক্ত তান্ত্রিকের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.