সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, রাজনীতিবিদ, বিদগ্ধ ব্যক্তিত্ব। সদ্যপ্রয়াত কৃষ্ণা বসুর জীবনের এসব নানা দিকে আলোকপাত করেই মানুষজন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, স্মরণ করছেন। তাঁর জীবনের সেইসব দিক অত্যন্ত উজ্জ্বল। খুব কম রোমাঞ্চময় নয় তাঁর ব্যক্তিজীবনও। অর্থাৎ, দেশনায়ক নেতাজির ভাইপো শিশিরকুমার বসুর সঙ্গে প্রণয়, বিবাহ এবং বিবাহ পরবর্তী জীবন। নব্বই ছুঁইছুঁই বিশিষ্ট ব্যক্তির শেষ দিনে তাঁর যৌবনের দিনগুলির দিকে ফিরে না তাকালে হয়ত অসমাপ্ত রয়ে যায় কৃষ্ণা বসুর বর্ণময় জীবনপাঠ।
ঢাকার মেয়ে থেকে এলগিন রোডের বউ কিংবা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গন্ডিতে প্রবেশ। এই যাত্রাপথের মধ্যে দিয়ে পেরিয়েছে কৃষ্ণা বসুর যৌবনের দিনগুলি। ঢাকা থেকে ২০ বছর বয়সে চলে আসেন কলকাতায়, উচ্চশিক্ষালাভের জন্য। সময়টা ঠিক স্বাধীনতা-উত্তর ভারত, ১৯৫০ সাল। সদ্য যৌবনে পা রাখা কৃষ্ণার কলকাতা আগমনই বদলে দেয় তাঁর জীবনের অনেকটা। সাধারণ মেয়ে হয়ে যান এক দেশনায়কের পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
কী সেই কাহিনি? কেমন সেই যাত্রাপথ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে বেশ কয়েকটি সম্পর্কের সমীকরণের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, লেখক নীরদচন্দ্র চৌধুরির ভাইঝি কৃষ্ণা বসু। খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব হওয়ার আগে নীরদচন্দ্র চৌধুরি ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মেজদাদা শরৎকুমার বসুর আপ্ত সহায়ক। যাঁর ‘ব্রিটিশ প্রীতি’ নিয়ে আনাচকানাচে বেশ ফিসফাস, গুনগুন শোনা যেত। এহেন এক ব্যক্তিত্বকে পারসোনাল সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত করার পর মেজদাদাকে সাবধান করেছিলেন নেতাজি। সে যাই হোক, দুঁদে ব্যরিস্টার শরৎ বসু আস্থা রেখেছিলেন নীরদ চৌধুরির উপরেই। এলগিন রোডের বাড়িতে শুরু হয় তাঁর অবাধ যাতায়াত।
এই সময়ে কাকার হাত ধরে কলকাতায় এসে পড়েন কৃষ্ণা বসু। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে ইংরাজি বিভাগে ভরতি হন। ওদিকে, ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে ভরতি হন শরৎ বসুর ছেলে, নেতাজির ভাইপো শিশিরকুমার বসু। বাবার আপ্ত সহায়কের ভাগ্নির সঙ্গে সরাসরি পরিচয় না হলেও, জানাশোনা হচ্ছিল একটু-আধটু। একে সুন্দরী, তার উপর বিদূষী, সঙ্গে প্রবল ব্যক্তিত্ব। আকর্ষণ স্বাভাবিক।
এলগিন রোডের বাড়ির বাইরে ক্যালকাটা মেডিক্যাল আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের দূরত্ব আর কতটুকুই বা ছিল? বেশি তো নয়। সেই দূরত্ব একটু একটু করে মুছে দিতে তৎপর ছিলেন শিশিরকুমার বসু। যুবতী কৃষ্ণারও তাতে আপত্তি ছিল না। মাঝে কাকার প্রশ্রয় থাকায় সম্পর্কের পথে এগোতে কোনও দ্বিধা করেননি। এভাবেই প্রণয় এবং পরিণয়। ১৯৫৫ সালে, ২৫ বছর বয়সে নেতাজি পরিবারের পুত্রবধূ হয়ে এলেন কৃষ্ণা বসু। পরবর্তী সময়ে এই বাড়ি থেকেই নিজের কেরিয়ার তৈরি করেছেন তিনি। একের পর এক কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। কৃষ্ণা বসুর নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া দুর্লভ কিছু ছবিতেই ধরা পড়ে তাঁদের দাম্পত্যের দৃঢ় বন্ধনের সমীকরণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.