বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: তৃণমূল সম্পর্কে কংগ্রেসের (TMC) অবস্থান বদলে উৎসাহিত আলিমুদ্দিনের কট্টরপন্থীরা। জোট বিরোধী শিবিরের ধারণা এতে পার্টিরই লাভ হবে। এককভাবে পার্টিকে শক্তিশালী করার পথে যেমন এগোনো যাবে, তেমনি জোট ভাঙার দায় নিতে হবে না। পালটা মতও রয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস (Congress) হাত ছাড়লে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বামেদের গুরুত্ব আরও কমবে বলে মনে করছে জোটপন্থীরা।
বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরার পর তৃণমূল সম্পর্কে প্রথম সুর নরম করতে দেখা যায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে (Adhir Ranjan Chowdhury)। ভবানীপুর আসনের উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে চান না বলে প্রকাশ্যেই জানান। পরবর্তীক্ষেত্রে মমতার পাশে দাঁড়ান পি চিদম্বরম, দিগ্বিজয় সিংয়ের মতো কংগ্রেসের শীর্ষনেতৃত্ব। একুশে জুলাইয়ের ভারচুয়াল বৈঠকে দিল্লিতে হাজির হন কংগ্রেসের এই দুই শীর্ষ নেতৃত্ব। গান্ধী পরিবারের নির্দেশেই মমতার বক্তব্য শুনতে সেদিন এই দু’জন হাজির হন বলে কংগ্রেসের অন্দরে জল্পনা। এরপর লোকসভার চলতি অধিবেশনে তৃণমূল সংসদীয় দলের সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের বোঝাপড়া হৃদকম্পন বাড়িয়েছে একেজি ভবনের ম্যানেজারদের। কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হয়েছে আলিমুদ্দিনের কর্তাদের। শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেসের এক সহ-সভাপতির মন্তব্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ। কংগ্রেস মমতার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিধানসভার ফল বেরোনোর আড়াই মাসের মধ্যে কংগ্রেসের এই অবস্থান বদল আলিমুদ্দিনের মধ্যেকার দ্বন্দ্বকে প্রকট করছে।
বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতায় সু্র চড়ায় পার্টির একাংশ। বিশেষ করে দুই বর্ধমান ও কলকাতা জেলা নেতৃত্বের একাংশ জোটের বিরোধিতায় সরব হন। কিন্তু এই অংশের নেতৃত্বের আপত্তি অগ্রাহ্য করে কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফন্টের (ISF) সঙ্গে হাত মেলান বিমান বসু, (Biman Bose) সূর্যকান্ত মিশ্ররা। এবার কংগ্রেসের অবস্থান বদল পার্টির অন্দরে জোট বিরোধী অংশকে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছে আলিমুদ্দিনের একাংশ। তাঁদের ব্যাখ্যা, মতাদর্শগত বিরোধ ছাড়াও কংগ্রেসের মতো দক্ষিণপন্থী দল কখনই লড়াইয়ের ময়দানে বিশ্বাসযোগ্য ও স্থায়ী বন্ধু হতে পারে না। তাঁদের আরও যুক্তি, কংগ্রেস চিরকালই ক্ষমতালিপ্সু দল বলে পরিচিত। এই দলের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সমঝোতা হতে পারে না। আগামী লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্যে কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতেই পারে। এইসব প্রশ্নে প্রথম থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছিলেন বলে দাবি জোট বিরোধী নেতৃত্বে। আগামী রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে জোট বিরোধীরা জোর সওয়াল করতে পারে বলে মনে করছে আলিমুদ্দিনের ম্যানেজাররা। অক্টোবর থেকে পার্টির সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা। সেখানেও বিতর্ক মাথাচাড়া দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.