বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: বঙ্গ রাজনীতি এখন ঘটনাবহুল। প্রতিদিনই চলছে দলবদলের পালা। রাজ্যের শাসকদল থেকে কেন্দ্রের শাসকদলে নাম লেখানোর হিড়িক। আর এই পরিস্থিতিতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে বামফ্রন্ট (Left Front)। রাজ্যের শাসকদল যত দুর্বল হবে, লাল পতাকার নিচে মানুষের ভিড় তত বাড়বে বলে আশা পার্টির ভোট ম্যানেজারদের। তাঁদের ব্যাখ্যা, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের (TMC) ভোটব্যাংক মূলত সংখ্যালঘু ভোট। বামেরা চলে যাওয়ার পর নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা শাসকদলে আশ্রয় নিয়েছিল। কেন্দ্রের শাসকের কাছ থেকে তৃণমূল তাঁদের রক্ষা করবে – এই ধারণা থেকেই সংখ্যালঘুরা বামেদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
কিন্তু রাজ্যের বর্তমান শাসকদল দুর্বল হলে সংখ্যালঘুরাও তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে শুরু করবে। অতীতে বামেরা ও কংগ্রেস তাঁদের নিরাপত্তা দিয়েছে। সেকথা মাথায় রেখেই রাজ্যের সংখ্যালঘু মানুষ তাঁদের দিকে ফের সরে আসবেন বলে মনে করছে আলিমুদ্দিন। আবার তৃণমূলকে শিক্ষা দিতে বামেদের যে অংশ পদ্মফুলে ছাপ দিয়েছিল, তার খানিকটাও ফিরবে বলে আশায় কমরেডকুল। তবে আগে বামেরাই যে বিজেপির মূল শত্রু এবং দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যাবে, সেই ভরসার জায়গা তাঁদেরকেই তৈরি করতে হবে বলে মনে করছেন সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। প্রতিদিন পথে থাকলেই সেই ভরসার জায়গা তৈরি হবে আশা তাঁর। যে কোনও কারণেই হোক, যাঁরা বাম থেকে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন – তাঁদেরও একটা অংশ ফের পুরনো দলে নাম লেখাবে বলে মনে করছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন মন্ত্রী হাফিজ আলম সইরানি। তাঁর কথায়, “২০১১ সালে পরিবর্তনের পর সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফরওয়ার্ড ব্লক। শীর্ষনেতাদের বেশিরভাগ দলবদল করেন। তাঁদের অনেকেই এবার ফিরবেন।”
অন্যদিকে, দেশের আরও দুই প্রান্তের ঘটনাও বামেদের পালে হাওয়া লাগাচ্ছে। দক্ষিণের মালয়ালি রাজ্যে লালঝড়, রাজধানী ঘিরে লাল পতাকার ছড়াছড়ি। কেরলে (Kerala) আশাতীত ফল বামেদের। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও স্থানীয় নির্বাচনে এমন ফল আশা করেননি অতি বড় কমরেডও। সাধারণত ৫ বছর রাজ্যপাট চালানোর পর মানুষের রায়ে বিদায় নিতে হয় কেরলের ক্ষমতাসীন দলকে। স্থানীয় ভোটের ফলই বাতলে দেয় বিদায়বেলার কথা। প্রথমত কোভিড, দ্বিতীয়ত কেন্দ্রীয় সরকারের চাপ আর তৃতীয় ও শেষ ৫ বছর ক্ষমতায় থাকার যন্ত্রণা। ত্রিফলায় জর্জরিত সিপিএম ধরেই নিয়েছিল, বিদায় নিশ্চিত। কিন্তু স্থানীয় ভোটের ফল দেখে নতুন করে আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছেন কমরেডরা।
আবার হাড়হিম করা ঠান্ডায় রাজধানীর পথঘাট ঘিরে বিক্ষোভে লক্ষ লক্ষ কৃষক (Farmers’ protest)। তাঁদের অধিকাংশের হাতেই লালঝান্ডা। নেতৃত্বে এক বঙ্গসন্তান – প্রাক্তন সাংসদ হান্নান মোল্লা। ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে। কৃষক আন্দোলনের ফসলও আলিমুদ্দিনের ঘরে জমা হবে বলে মনে করছেন পার্টির কর্তারা। ফলে শীতের সকালে হাসি ফুটছে লালপার্টির নেতাদের মুখে। বলছেন, সবুর করো। ফসল লাল মাটিতেই ফলবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.