অর্ণব আইচ: ‘বৃদ্ধ ঘড়ি’ দিচ্ছে ভূতুড়ে সময়। বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে তার কাঁটা দাঁড়িয়ে ২টো ৫৫ মিনিটে। আবার রাত ৮টা ২৫ মিনিটে সেসময় দেখাচ্ছে ৪টে ১৭ মিনিট। রাত না দুপুর, বোঝার উপায় নেই। অতি পুরনো এই ঘড়ির এ হেন কাণ্ড দেখে কী করবেন, তা ভাবতে পারছেন না লালবাজারের পুলিশকর্মীরা। গোয়েন্দা বিভাগের ‘টাওয়ার ক্লক’। যা লালবাজারের পুলিশকর্মীদের কাছে পরিচিত ‘বড় ঘড়ি’ নামে। তার এই অবস্থা দেখে রীতিমতো বিচলিত কর্তারাও। তাই এবার এই ঘড়িটি সারানোর জন্য রীতিমতো টেন্ডার ডেকেছে লালবাজার। ঘড়িটি নতুন করে মেরামতি ও দেখভালের ব্যাপারেই গুরুত্ব দিচ্ছেন পুলিশকর্তারা।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (Detective Department) এই ঘড়িটির বয়স কম হল না। বহু বছর আগে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকরাও দেখেছেন গোলাকার এই ঘড়িটিকে। লালবাজারের এই ঘড়িটি তাঁদের মনে করিয়েছে হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ির কথা। তাই লালবাজারের পুলিশকর্মীদের মুখে মুখে এই ঘড়িটির নাম হয়ে গিয়েছে ‘বড় ঘড়ি’। এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক জানান, তাঁদের সময় মোবাইল ছিল না যে যখন তখন পকেট থেকে বের করে সময় দেখবেন। তাই লালবাজারের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করে এগোনোর পর অভ্যাসই হয়ে গিয়েছিল বাঁদিকে মুখ তুলে তাকানোর। গোয়েন্দা বিভাগের গেটের উপর থাকা এই ঘড়িটি দেখে নিজের হাতঘড়ির সময় মিলিয়ে নিতেন অনেকে। আবার অনেকেই এই ‘বড় ঘড়ি’ মিলিয়ে দেখতেন, অফিসে লেট হয়ে গেল কি না। আবার কাজ শেষ করে বাড়ি যাওয়ার আগেও অনেকে ঘড়ি মিলিয়ে নিতেন। তবে ‘বৃদ্ধ’ এই ঘড়িটি ‘স্লো’ অথবা খারাপ হয়ে যাওয়া নতুন নয়। কয়েক বছর আগে লালবাজারে কাজ হওয়ার সময়ও খারাপ হয়ে গিয়েছিল এই ঘড়ি। তখনও সেটি সারানো হয়। এবারও ‘বৃদ্ধ ঘড়ি’ অসুস্থ হয়ে পড়ে গত বছরের শেষের দিকেই।
লালবাজারের (Lalbazar) এক আধিকারিক জানান, প্রথমে পুলিশকর্মীরা বুঝতে পারেননি। কিন্তু মোবাইলের যুগেও এই ঘড়ির গুরুত্ব কমেনি। এখনও অনেক পুলিশকর্তার চোখ চলে যায় এই ঘড়ির দিকে। ফলে গোলমাল ধরে পড়ে। মোবাইলের সময়ের সঙ্গে মিলছে না ঘড়ির সময়। ধীরে চলেছে ঘড়ির কাঁটা। এমনও দেখা যায় যে, পৌনে তিন ঘণ্টায় ‘বড় ঘড়ি’র কাঁটা সরেছে মাত্র দেড় ঘণ্টা। সেইমতো ভুতুড়ে সময় দিচ্ছে এই ঘড়ি। লালবাজারের কর্তাদের কানে আসামাত্রই এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উঠেপড়ে লাগেন তাঁরা। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, তাঁরা চান এবার সারানোর পর যেন আর এই ঘড়ি খারাপ না হয়। তাই টেন্ডার ডাকা হয়েছে। এই ‘বৃদ্ধ’ ঘড়ি যেন বহু বছর বেঁচে থাকে, এমনই আশা লালবাজারের পুলিশকর্মীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.