অর্ণব আইচ: মনে মনে পরিকল্পনা করেছিলেন ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে কাছের মানুষটির সঙ্গে আরও নিবিড় হওয়ার। অসুবিধা কোথায়? আর ক’দিন পরই যে তাঁদের বিয়ে। ‘বিপত্নীক’ মানুষটির উপর সহানুভূতিও তৈরি হয়েছিল যুবতীর। কিন্তু চমকে গেলেন ‘হবু স্বামী’র বাড়িতে গিয়ে। রীতিমতো তাড়া খেলেন ‘বিপত্নীক’ লোকটির বউয়ের। তার সঙ্গে হুমকিও। ভালবাসার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। তার উপর ‘বিপত্নীক’ বন্ধুটির স্ত্রীর হুমকি, “আমার স্বামী যা করেছে, বেশ করেছে। পুলিশকে বললেই দেখে নেব।” কিন্তু গত দেড় বছরে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে ওই ব্যক্তিটি দিনের পর দিন শ্লীলতাহানি করেছে যুবতীর। তাঁর কাছ থেকে দফায় দফায় নিয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকাও। তবে ওই হুমকি শুনেও পিছিয়ে আসেননি পেশায় শিক্ষিকা ওই যুবতী। দক্ষিণ কলকাতায় হেস্টিংস থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি বিয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুবতীর সঙ্গে পরিচয় হয় অভিযুক্ত ব্যক্তির। প্রাথমিক পরিচয়ের পর গড়িয়াহাটে দেখা করেন দু’জন। যুবতীকে সে জানিয়েছিল, তার স্ত্রী মারা গিয়েছেন। বিপত্নীক হলেও থাকে অবিবাহিতর মতোই। যুবতীর সঙ্গ চায় সে। সারা জীবনের মতো পেতে চায় তাঁকে। ‘বিপত্নীক’ ব্যক্তিটিকে দেখে হৃদয় গলেছিল যুবতীর। তাই কথা দিয়েছিলেন, লোকটির পাশে তিনি দাঁড়াবেন। ব্যক্তিটি তাঁকে নিজের গাড়িতে তুলে নিত। বেশিরভাগ সময়েই বান্ধবীকে নিয়ে যেত হেস্টিংস এলাকায়। এ ছাড়াও শহরের আরও কয়েকটি জায়গায় যান দু’জনে। সেখানে গাড়ির মধ্যেই হত দু’জনের কথোপকথন। এভাবে মেলামেশার ফলে যুবতী তাঁকে ভালবেসে ফেলেন। ব্যক্তিটিও তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। বন্ধু তথা হবু স্বামী মাঝেমাঝেই তাঁর কাছ থেকে দামি জিনিসপত্র চাইত। তিনি তাঁকে সেগুলি কিনে দিতেন। কয়েক দফায় তাঁর কাছ থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকা নেয় সে। ভালবাসার নাম করে যুবতীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করে। এমনকী, গাড়ির মধ্যে তাঁর শ্লীলতাহানিও করে সে। এর পর একাধিকবার যুবতীকে সে কুপ্রস্তাব দেয়। কিন্তু যুবতী তাতে সাড়া দেননি। বরং বিয়ের জন্যই চাপ দিতে থাকেন। বলেন, তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তার মা ও অন্য পরিজনদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। কিন্তু বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে থাকে সে। এর পর যুবতী বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলেই আসল রূপ বের হয়ে পড়ে তার। সম্পর্কের বিষয়টি কাউকে জানালে তাঁকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়।
যুবতী বুঝতে পারেন, তিনি ফাঁদে পড়েছেন। তিনি ‘বন্ধু’র বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। বের করেন ওই ব্যক্তির ঠিকানা। সেই ঠিকানায় গিয়েই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। ‘বিপত্নীক’ হবু স্বামীর স্ত্রী রয়েছে ঘরে। আছে দুই সন্তানও। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে পুরো বিষয়টি খুলে বলতেই পালটা চাপ তাঁর উপর। রীতিমতো স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে যুবতীকে ওই মহিলা জানান, তাঁর স্বামী উচিত কাজই করেছে। দম্পতি একসঙ্গে তাঁকে ভয় দেখায় ও হুমকি দেয়। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রতারণা, শ্লীলতাহানি, ভয় দেখানো, অভব্য আচরণের মামলা শুরু করেছে। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.