রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে কুড়মি বিক্ষোভে গড় শালবনিতে ধুন্ধুমার। এই ঘটনার নেপথ্যে বিজেপি রয়েছে বলেই দাবি করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অভিযোগ খারিজ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
শনিবার ইকো পার্কে প্রাতঃভ্রমণের পর দিলীপ ঘোষ ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে কুড়মি বিক্ষোভের বিরোধিতা করেন। বলেন, “জয় শ্রীরাম স্লোগান কে শুনেছে? মিডিয়া দেখিয়েছে ‘চোর চোর’ স্লোগান। উনি বলছে যেখানে যাচ্ছি হাজার হাজার লোক পথের ধারে দাঁড়িয়ে ‘জয় বাংলা’ বলছেন উনি ‘জয় শ্রীরাম’ শুনতে পেলেন? অভিষেকের উদ্দেশে দিলীপ আরও বলেন, “আপনি তো নবজোয়ার কর্মসূচিতে বেরিয়েছেন। এত রাতে জঙ্গলে কেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন? জঙ্গলমহলের মানুষ শান্তিপ্রিয়। সন্ধেয় বাড়ি চলে যান। কোনও সুস্থ মানুষ রাতে ওইখানে বেরোন না।” তাঁর নিজের কনভয়ে একাধিকবার বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে দিলীপের তোপ, “আমি জানি গাড়ি ভাঙা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরম্পরা। একাধিকবার আমার গাড়ি ভেঙেছে। কোথাও তো দুঃখ প্রকাশ করেনি তৃণমূল। কারণ তাদের লোকেরাই আমার গাড়ি ভাঙে।”
তৃণমূল আদিবাসীদের অপমান করেছেন বলেও অভিযোগ করেন দিলীপ। তাঁর তোপ, “জঙ্গলমহলে গিয়ে আদিবাসী কর্মীদের অপমান করছেন। ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও পানীয় জল দিতে ব্যর্থ। কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত অনেকেই। আবাস যোজনার টাকা লুট করেছে। শৌচালয়ের জন্য ৯০০ থেকে হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোন পরিবারকেই শৌচালয় দেওয়া হয়নি। কৃষক-সম্মান নিধির ৬ হাজার টাকাও হজম করে নেওয়া হয়েছে। তারপরেও আপনারা কুড়মিদের আদিবাসী স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে বলে ঠকাচ্ছেন। কিন্তু পাঠানো হয়নি। বারবার তাদের সঙ্গে ধোঁকাদারি করছে তৃণমূল সরকার।”
কুড়মিদের ঘাঘর ঘেরাও কর্মসূচির মুখে পড়েন দিলীপ ঘোষ। তারপর হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। তার প্রতিবাদে কুড়মিরা দিলীপ ঘোষের বাংলো ঘেরাও করেন। সে প্রসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি বলেন, “দিলীপ ঘোষের বাড়িতে টাকা দিয়ে বাস ভাড়া করে লোক পাঠিয়েছে, বাংলোতে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য পুরুলিয়া থেকে লোক আনানো হয়েছিল। তখন খুব হেসেছিলেন। ওখানকার গরিব মানুষকে আপনারা প্রতারিত করবেন। তারা খেতে পায় না অন্য রাজ্যে মজদুরের কাজ করতে যায় তাদের সঙ্গে উপহাস করছেন। আমরা বলেছি এটি আইনত ব্যাপার নির্দিষ্ট কমিটি আছে তারা বিচার বিবেচনা করবেন। কখনও পক্ষে বলছেন, কখনও বিপক্ষে বলছেন, কখনও সাঁওতাল, কখনও আবার কুড়মিদের খেপিয়ে তুলছেন। গোর্খারাও আপনাদের উপর ক্ষিপ্ত। চালাকি এবং ভাগাভাগির রাজনীতির ফল ভুগতে হচ্ছে। গাড়িতে পাথর পড়তে প্যান্ট ঢিলে হয়ে যাচ্ছে। দু-তিন বছর ধরে আমার পিছনে গুন্ডা লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দেখ কেমন লাগে।”
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধেয় অভিষেকের সভায় যোগ দিতে গোপীবল্লভপুরের দিকে যাচ্ছিলেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তুলে একদল কুড়মি বিক্ষোভকারী তাঁর উপর হামলা চালায় বলেই অভিযোগ। রাতে গোপীবল্লভপুরের অধিবেশন থেকে কড়া বার্তা দেন অভিষেক। বিজেপিকে নিশানা করে এই ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে বিবৃতি দাবি করেন। ইতিমধ্যেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করেছে পুলিশ। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর এবং খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় মামলা শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। এখনও পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.