অর্ণব আইচ: কেউ বা দিল্লিতে এক কোটি টাকার সম্পত্তি কিনেও ক্রয়মূল্য দেখিয়েছেন দশ লাখ টাকা। আবার কেউ বা দেখিয়েছেন, হুগলির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কলেজ তৈরির জন্য সোয়া এক একর জমি কিনেছেন মাত্র দশ লাখ টাকায়। কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্য়োপাধ্যায়, অয়ন শীল, প্রসন্ন রায়দের ‘কম দামে’ জমি কেনার হিড়িক দেখে হতবাক হয়েছেন ইডি ও সিবিআই আধিকারিকরা। তাঁদের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির এই অভিযুক্তদের প্রত্য়েকেই বিপুল পরিমাণ টাকার সম্পত্তি খাতায় কলমে দেখিয়েছেন প্রায় দশ ভাগ দামে। অভিযুক্তরা যতই অল্প দামে সম্পত্তি কেনার দাবি করুন না কেন, আসলে নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল কালো টাকা খরচ করে কেনা হয়েছে প্রত্য়েকটি সম্পত্তি। তদন্তকারীদের মতে, শুধু রেজিস্ট্রেশন ও স্ট্যাম্প ডিউটি ফাঁকি দিতেই ‘অতি সস্তায়’ জমি কেনা হয়েছে বলে দেখিয়েছেন প্রত্য়েকেই। বাকি ৯০ ভাগ দাম যে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকায় মেটানো হয়েছে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত সিবিআই ও ইডি। সিবিআই জানিয়েছে যে, এসএসসির নবম দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত প্রসন্ন রায় ২০১৭ সালে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা দিয়ে রাজারহাটে একটি সম্পত্তি কেনেন। অথচ আসলে দেখা গিয়েছে যে, ওই সম্পত্তির আসল দাম ২৮ কোটি টাকা। বাকি ২৪ কোটি নগদ কালো টাকায় মেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের।
আবার অন্য অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার দেখা গিয়েছে বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। ইডির কাছে যে নথি এসেছে, তাতে প্রমাণ মিলেছে যে, হুগলির বলাগড়ে কুন্তল দু’টি জমি কেনেন মাত্র ৮০ হাজার টাকা দিয়ে। আবার হুগলির ধনেখালির মন্দ্রাগ্রাম এলাকার কাকগাছিতে সোয়া এক একর জমি কেনা হয় ইন্দ্রাণী দেবী ইন্সটিটিউট অফ এডুকেশনের নামে। এর সভাপতি কুন্তল ঘোষ নিজেই। দেখানো হয়েছে, কুন্তল এই জমি কিনেছেন দশ লাখ টাকা দিয়ে। এ ছাড়াও জমির রেজিস্ট্রেশন ফি ২৫ হাজার ৫৮০ টাকা ও স্ট্যাম্প ডিউটি ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৮৯ টাকা। জমির মোট দাম ১১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬৯ টাকা। অথচ ই়ডির গোয়েন্দারা খবর নিয়ে জেনেছেন যে, ওই অঞ্চলে সোয়া এক একর জমির দাম ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার কমে হওয়া উচিৎ নয়। সেই ক্ষেত্রে বাকি টাকা নগদে দিয়েছেন কুন্তল। আবার কুন্তল তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী ঘোষের নামেও বলাগড়ে একটি সম্পত্তি কেনেন। সম্পত্তির একতলাটি ১০৪৭ বর্গফুট ও দোতলাটি ১১০৩ বর্গফুট জুড়ে। দেখানো হয়েছে, মোট ২৪ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে পুরো সম্পত্তি। ইডির চার্জশিট অনুযায়ী, হুগলিতেই শুধু কুন্তল ঘোষ বিপুল সম্পত্তি কিনেছেন মাত্র ৪৯ লাখ ৬ হাজার ১৪৮ টাকা খরচ করে।
আবার অয়ন শীলের ক্ষেত্রে ইডি জেনেছে, দিল্লিতে স্ত্রী ও ছেলের নামে কেনা এক কোটি টাকার সম্পত্তি অয়ন দশ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন বলেই দাবি করেন। আবার হুগলির বিভিন্ন জায়গায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে যে দামে অয়ন তাঁর এজেন্টদের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা করেছেন বলে তাঁর দাবি, তার থেকে অনেক দাম আসল জমির, এমন খবর ইডি আধিকারিকদের কাছে। শান্তনু বন্দে্যাপাধ্যায় হুগলি ও বিভিন্ন জায়গায় নামে ও বেনামে প্রচুর জমি অনেক সস্তায় কিনেছেন বলে দেখিয়েছেন। এভাবে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্তরা কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন বলে জানিয়েছে সিবিআই ও ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.