Advertisement
Advertisement
Kunal Ghosh

মানিকতলায় ‘প্রতিকূল পরিস্থিতি’, আগের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে কুণালের সাহায্য ভিক্ষা কল্যাণের

কুণালের প্রকাশ করা অডিও বার্তায় স্পষ্ট, মানিকতলায় দলের পরিস্থিতি যে অনুকূল নয়, সেটা ভোটের আগেই বুঝেছেন কল্যাণ। সেকারণেই কুণালকে অন্তর্ঘাতে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।

Kunal Ghosh releases full video of his Conversation with Kalyan Chaubey
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:July 9, 2024 9:21 pm
  • Updated:July 9, 2024 10:27 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানিকতলা উপনির্বাচনের একদিন আগে বঙ্গ রাজনীতিতে রীতিমতো বোমা ফাটালেন কুণাল ঘোষ। মানিকতলা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে পদের লোভ দেখিয়ে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছেন, মঙ্গলবার দুপুরে একটি সংক্ষিপ্ত অডিও প্রকাশ করে দাবি করেছিলেন কুণাল। রাতে প্রকাশ্যে এল পূর্ণাঙ্গ অডিও। সেই অডিওতেই প্রমাণ, কুণাল যা যা অভিযোগ করেছিলেন, তার একবর্ণও আতিশয্য নয়। কল্যাণ চৌবে তাঁর কাছে রীতিমতো সাহায্য ভিক্ষা করেছেন। শুধু তাই নয়, অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন।

কুণাল প্রথমে অডিও প্রকাশ করার পর তাঁর আনা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করার চেষ্টা করেছিলেন কল্যাণ। সেকারণেই এদিন রাতে পূর্ণাঙ্গ অডিও প্রকাশ করেন তৃণমূল নেতা। সেই অডিওতে কল্যাণকে অতীতের ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করতে শোনা গিয়েছে। আসলে বছর দুয়েক আগে কুণাল সুকিয়া স্ট্রিটের যে আবাসনে থাকেন সেই আবাসনের এক বিজেপি কর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। ঘটনাচক্রে সেদিন কুণালের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ধর্মেন্দ্রর। সেখানে ছিলেন কল্যাণও। পরে মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী সেই অরাজনৈতিক সাক্ষাৎকে রাজনৈতিক রং দেওয়ার চেষ্টা করেন। সেসময় এ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে বিস্তর চর্চাও হয়।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ত্রিশঙ্কু ভোটের ফল, ফ্রান্সে মুখ পুড়ল প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর]

কুণালের ফাঁস করা ফোনালাপে প্রথমেই কল্যাণ সেই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন। ওই ফোনালাপের শুরুতেই কুণালকে বলতে শোনা যায়, “আমি আমার এলাকায় ঢুকছিলাম, আপনার পার্টির ছেলেরা আমায় ধরে নিয়ে গেল। আপনার প্রতিক্রিয়া আমার খুব খারাপ লাগল। হয়তো আপনার উপর চাপ ছিল। নাহলে এত খারাপ মন্তব্য আপনার কাছে আমি প্রত্যাশা করিনি।” তাতে খানিক অনুনয়ের সুরে কল্যাণ বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, ওটা বলতে হবে। আপনি আমাকে চেনেন, আমি তঞ্চকতায় অভ্যস্ত নই। আপনার জায়গায় থাকলে হয়তো আমারও খারাপ লাগত। আমার ব্যক্তিগত তঞ্চকতা নয় বলেই আশা করি ধরে নেবেন। যদি ব্যক্তিগতভাবে যদি আপনার আবেগে আঘাত লেগে থাকে, অসম্মান হয়ে থাকে তাহলে…। আপনার জায়গায় থাকলে আমারও একই রকম প্রতিক্রিয়া হত।”

এর পরই একপ্রকার ভিক্ষার সুরে কল্যাণ বলেন, “উপনির্বাচনে আমি আপনার সহযোগিতা চাইছিলাম।” এবারে উৎসুক স্বরে কুণালের প্রশ্ন, “আমার এটা জানার আগ্রহ আপনি দাঁড়াতে গেলেন কেন? একুশ সালে একই জায়গায় হেরেছেন, আবার কেন রিস্ক নিতে গেলেন? তাতে কল্যাণ বললেন, “পার্টি সিম্বলে তো কাউকে না কাউকে দাঁড়াতে হত। ভালো সময়ে তো যে কোনও লোক দাঁড়ানোর জন্য মারামারি করে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাউকে দাঁড়াতে হবে।” বস্তুত পরিস্থিতি যে প্রতিকূল সেটা মেনে নিয়েছেন কল্যাণ। সেই সঙ্গে কুণালকে তাঁর অনুরোধ, “আপনার যা মনে হবে, যতটা মনে হবে, ততটুকু সাহায্য আশা করি।”

সেই অনুরোধ কুণাল স্পষ্ট নাকচ করে বলে দেন, “আমি এই নির্বাচনে তৃণমূলের কনভেনর। আমাদের ব্যক্তিগত যতই সুসম্পর্ক থাক, এই পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি? আমার কাজ এখন খুব সত্যি কথা বলতে কী, দল বা নেত্রী যেটা দিয়েছেন, সেটা হল দলকে জিতিয়ে আনা। কত ভোটে জেতানো যায় সেটার চেষ্টা করা।”

কিন্তু তাতেও যেন নাছোড়বান্দা কল্যাণ। এবারে তাঁর অনুনয়, “আপনি যা বলছেন আমি একদম একমত। তবুও যদি মনে হয়, আপনি আমাকে সাহায্য করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনে যখন লড়ছি, জেতার জন্য জন্যই সাহায্য চাইছি। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই। আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল দেখছেন। নিজে দীর্ঘদিন সাংবাদিক ছিলেন। এখন মোহনবাগানের সঙ্গে যুক্ত। ময়দানের পাঁচজন ভদ্র ফুটবলারের যদি তালিকা হয় তাতে আমার নাম আসবে। আমি কুণালদা আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করছি, একটা উপনির্বাচনে তো আর আপনার সরকার গড়বে না বা ভাঙবে না। যদি কোথাও মনে হয়…!”

[আরও পড়ুন: ‘রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব কখনও মাইনাসে নামবে না’, মস্কোয় মন্তব্য মোদির]

কল্যাণের সেই বক্তব্যের পরও কুণাল নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমরাও সেটাই মানুষকে বলছি, এতে সরকার গড়বে না ভাঙবে না। তাই সরকার পক্ষকে ভোট দিন।” কুণালকে কিছুতেই বোঝাতে না পেরে মরিয়া কল্যাণ এর পর একপ্রকার ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁকে। মানিকতলার বিজেপি প্রার্থী এবার বলেন, “আমি যদি এখান থেকে বিধায়ক হতে পারি আমার মনে হবে তাহলে তাতে আপনার বৃহৎ ভূমিকা থাকবে। আমি খেলাধুলোর মধ্যে রয়েছি। যদি আপনার কখনও মনে হয়, সেটা রাজ্যস্তরে হোক বা সর্বভারতীয় স্তরে তাহলে সেখানে আমি আপনাকে পদ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।” এবারও সবিনয়ে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন কুণাল।

বস্তুত এই অডিও বার্তায় স্পষ্ট, মানিকতলায় দলের পরিস্থিতি যে অনুকূল নয়, সেটা ভোটের আগেই বুঝেছেন কল্যাণ। সেকারণেই কুণালকে অন্তর্ঘাতে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। প্রস্তাব দিয়েছিলেন ঘুষ নেওয়ারও। তবে তাতে কাজের কাজ হয়নি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement