তনুজিৎ দাস: যেমনটা বলেছিলেন, তেমনটাই করলেন। দু দিনের জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব মিটিয়ে শিলং থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক কয়েকটি অভিযোগ উগড়ে দিলেন সাংবাদিক তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে তাঁর নির্দিষ্ট অভিযোগ, ‘সিবিআই অফিস থেকে বেরিয়ে রাজীব কুমার কাদের ফোন করছেন? জিজ্ঞাসাবাদে যাঁদের নাম উঠে আসছে, যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হতে পারে, রাজীব কুমার ফোন করে তাঁদের সতর্ক করছেন। উনি চরম প্রভাবশালী একজন আইপিএস। সেসময় সিটের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, যাঁরা বিধাননগর পুলিশে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন, তাঁদেরই ফোন করেছেন রাজীব কুমার। ১১ তারিখ জেরাপর্বে তিনি নিজেই বলে ফেললেন যে আগেরদিন রাতে ওই পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। এই আশঙ্কা তৈরি হয় যে, আবার সেই সিবিআইকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে কিনা। সিবিআই-কে আমি লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছি, রাজীব কুমারের এই ভূমিকার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকবে না, বিলম্বিত হবে।’
এর আগে সারদা তদন্তের জেরে বেশ কিছুটা সময় কারাবাসে কাটাতে হয়েছিল কুণাল ঘোষকে। সেদিনের জন্য সরাসরি পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকেই দায়ী করছেন দুঁদে সাংবাদিক। তাঁর দাবি, ‘একদিন আমার প্রতি অবিচার হয়েছিল। সেদিন আমার কথা শোনেননি রাজীব কুমার। আজ, ৬ বছর পর সিবিআইয়ের জেরাপর্বে তাঁকে আমার মুখোমুখি বসতে হল, আমার প্রশ্ন শুনতে হল, উত্তর দিতে হল, এটা আমার নৈতিক জয়। এতদিন পর হলেও, আমি তাঁকে নিজের কথা বলতে পারলাম।’ কলকাতার নগরপালের প্রতি তাঁর মন্তব্য, ‘২০১৯’এ রাজীব কুমারকে দেখে আমার খারাপ লাগছে। একজন এত বড় আইপিএস অফিসার, কলকাতার নগরপাল, তাঁকে যেভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রেখে জেরা চলছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন চলছে, উত্তর দিতে হচ্ছে, তাতে একটাই কথা মনে হচ্ছে। সময়মত সক্রিয় ভূমিকা নিলে, আজকের দিনটা দেখতে হতো না তাঁকে।’
মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অটোর সঙ্গে ধাক্কা, দুর্ঘটনার কবলে খাদ্যমন্ত্রীর গাড়ি
এদিন বিকেল পাঁচটার কিছু পরে দমদম বিমানবন্দরে নামেন কুণাল ঘোষ। আগেই জানিয়েছিলেন, শিলং থেকে ফিরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের কথা বলবেন। চিটফান্ড তদন্তে শিলংয়ে সিবিআইয়ের জেরা প্রক্রিয়া নিয়ে একটি মন্তব্যও করতে নারাজ রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ। স্পষ্ট বললেন, ‘জেরা নিয়ে একটিও মন্তব্য নয়। কারণ এটা অনগোয়িং প্রসেস। কী প্রশ্ন, কী উত্তর,এসব বলব না।’ তবে সিবিআইয়ের কার্যপদ্ধতি নিয়ে সুকৌশলে বুঝিয়ে দিলেন নিজের অবস্থান। কুণাল ঘোষের কথায়, ‘ জেরায় সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট–এটা বলার সময় এখনও আসেনি। এই মুহূর্তে দেখে মনে হতে পারে খুব দ্রুততার সঙ্গে কাজ হচ্ছে। তবে এনিয়ে বিশাল কিছু হয়ে যাচ্ছে,ভাবার দরকার নেই। সিবিআই আগে অনেকটা সময় আগে নষ্ট করেছে। তাই কাল যে ফের ঘুমিয়ে পড়বে না, তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই।’ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিলংয়ে সিবিআই দপ্তরে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গে চিটফান্ড তদন্তে সিবিআইয়ের আলোচনা চলছে গত তিনদিন ধরে। রবিবার সিবিআইয়ের তলবে শিলংয়ে গিয়েছিলেন কুণাল ঘোষও। দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর ঘোরাফেরা করছিল। এদিন কুণাল ঘোষের সাংবাদিক সম্মেলনের তা স্পষ্ট হয়ে গেল।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.