অভিরূপ দাস: তলপেটের ব্যথা নিয়ে এসেছিল এসএসকেএম-এর জরুরি বিভাগে। আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয় বছর চোদ্দর কিশোরী। দেখা যায় তলপেটের ক্ষুদ্রান্ত্রের বিশাল একটা অংশ পচে গিয়েছে। পরিবারের লোকেরা বুঝতে পারেন, মেয়ের সুস্থ হতে সময় লাগবে। বাড়ি ফিরে যান। টানা ৪৮ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে তাকে নিয়ে চলে যমে মানুষে টানাটানি। অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠা। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার তো উপায় নেই। সুদূর পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের ময়না থেকে মেয়ের কাছে আসতে পারছিলেন না মা-বাবাও। করোনা (Coronavirus) আবহে বছর চোদ্দর কিশোরীকে গত শনিবার নিজের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নজির গড়লেন এসএসকেএম-এর ইউনিট ৬ সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা। ডা. পবন মণ্ডল এবং অ্যানাথেসিস্ট ডা.সর্দার নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন ওই কিশোরীকে।
জুন মাসের ৭ তারিখের কথা। তলপেটের ব্যথা নিয়ে এসএসকেএমে এসেছিলেন চোদ্দ বছরের কিশোরী। ইউনিট ছয় সার্জারির বিভাগীয় প্রধান ডা. বিতান চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কিশোরীর হার্নিয়ার সমস্যা ছিল। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। অপারেশন থিয়েটারের টেবিলেই ওর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। পেট খুলে দেখা যায় কিশোরীর ৫০০ সেন্টিমিটার ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে ২৪০ সেন্টিমিটারই পচে গিয়েছে। বোঝা যায় “সেপটিক লোড”-এর কারণেই এই হার্ট অ্যাটাক। বাদ দিয়ে দেওয়া হয় ওই পচে যাওয়া অংশ।
অস্ত্রোপচারের পর আবার একটা হার্ট অ্যাটাক। কিশোরীকে আইটিইউতে ঢোকানো হয়। এয়ারওয়ে সিপিআর-এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তার শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা হয়। এরপর দীর্ঘ সাত সপ্তাহ কেটে গিয়েছে হাসপাতালে। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে কিশোরীকে একা ছাড়তে সাহস পাচ্ছিলেন না চিকিৎসকরা। ডা. বিতান চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “ওর এখন প্রয়োজন দীর্ঘ বিশ্রামের। ক্ষুদ্রান্ত ছোট হয়ে গেলে শর্ট বাওয়েল সিন্ড্রোম দেখা যায়। তা কাটাতে ইন্ট্রাভেনাস খাবার দিয়েছি আমরা। ধীরে ধীরে “মাউথ ফুড” বাড়িয়েছি। কয়েকদিন ধরেই ও বাড়ি যেতে চাইছিল।” তাই ডা. পাবন মণ্ডল আর ডা. সর্দার সাপ্তাহিক লকডাউনের মধ্যে নিজেদের গাড়িতে ওকে মেদিনীপুরের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.