সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘মারব এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে!’ পর্দার ফাটাকেষ্ট মিঠুন চক্রবর্তীর বিখ্যাত ডায়লগ। বাস্তবেই কি এমন সংলাপ থাকত কলকাতার প্রথম ‘ডন’ ফাটাকেষ্টর মুখে? থাকুক বা না থাকুক, ফাটাকেষ্টর শুরু করা কালীপুজো ছিল তিলোত্তমার অহঙ্কার। জাঁকজমকপূর্ণ পুজোতে সাধারণ দর্শক ভিড় করতো তো বটেই, পাশাপাশি সেকালের মেগাস্টার উত্তমকুমার থেকে অমিতাভ বচ্চনের মতো তারকা-যোগ ছিল এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। ফাটাকেষ্ট আর নেই, তবে সাড়ম্বরে সেই কালীপুজো হবে এবারও। জোরকদমে চলছে তার প্রস্তুতি।
দুর্গাপুজো মানে যদি কলকাতা হয়, তবে কালীপুজোয় লোক টানে শহরতলি বারাসত-মধ্যমগ্রাম। অবশ্য গঙ্গা তীরস্থ শহরে একাধিক প্রখ্যাত কালীমন্দির রয়েছে, বচ্ছরকার সেরা অমানিশায় সেখানেও অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমে। ঠিক ততটাই জনপ্রিয় ফাটাকেষ্টর কালীপুজো। ইতিমধ্যে মায়ের চক্ষুদান পর্ব সম্পূর্ণ হয়েছে কুমোরটুলিতে। এবার পুজোর দিনের অপেক্ষা। প্রশ্ন হল, উত্তর কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রিট, বইপাড়া লাগোয়া এই পুজো কীভাবে হাই প্রোফাইল হয়ে উঠল? এতটাই যে আমন্ত্রণ পাওয়ামাত্র সেখানে উত্তম, অমিতাভ, রাজেশ খান্না, বিনোদ খান্না, আশা ভোসলে, আর ডি বর্মনরা হাজির হন!
অনেকের মতে, ভয়ের কারবার থেকেই সেকালে তারকা সম্মেলন হত ফাটাকেষ্টর পুজোতে। রাজনীতি থেকে মাস্তান দুনিয়া… সব ক্ষেত্রেই কলকাতার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের ডন কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ওরফে ফাটাকেষ্টর প্রভাব কতটা ছিল তা একটি ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়। সেকালে আমহার্স্ট স্ট্রিটের উঠতি কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রর পুজো আর ফাটাকেষ্টর পুজোর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই ছিল। তখন নকশাল আন্দোলনে স্তব্ধ শহর। সোমেনের পুজোর ঠাকুর আটকে যায়। ফাটাকেষ্ট ঠাকুর উত্তাল শহরের ঝঞ্ঝা ডিঙিয়ে নির্বিঘ্নে মণ্ডপে পৌঁছায়। কালের নিয়মেই সেই দাপট স্তিমিত হয়েছে। একটি যুগের অবসান হয়েছে ১৯৯২ সালে। সে বছরই হৃদরোগে মৃত্যু হয় ফাটাকেষ্টর। পুজো অবশ্য বন্ধ হয়নি।
আগের মতোই গাঢ় নীল বিরাট দৈর্ঘ্যের মাতৃ প্রতিমা হয়। বহরে কমলেও শোভাযাত্রা করেই ঠাকুর আনা হয় পুজোর স্থানে। ভাসনও হয় মিছিল করে। সঙ্কল্প পূরণে জাগ্রত দেবীর কাছে মানত করেন বহু মানুষ। আড়ম্বর খানিক কমলেও কলকাতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফাটাকেষ্টর এই পুজো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.