সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় জখম দুই শিশুর অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তাদের চিকিৎসায় সাত সদস্যের মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে জখম ঋষভ সিংয়ের অস্ত্রোপচার করা হয়। আপাতত কৃত্রিম ফুসফুসের সাহায্যে শ্বাস নিচ্ছে ওই স্কুলছাত্র। এদিকে, জখম আরও এক শিশু দিব্যাংশু ট্রমা কেয়ার ইউনিটে রয়েছে। এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শিশুদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতে হাসপাতালে গিয়ে শিশুদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
দুর্ঘটনার সময় ওই পুলকারে এক অভিভাবক ছাড়া ১৪ জন পড়ুয়া ছিল। সকলেই চুঁচুড়ার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রছাত্রী। বাড়ি শ্রীরামপুর ও শেওড়াফুলিতে। সকালে তাদের নিয়ে পুলকারটি দিল্লি রোড ধরে চুঁচুড়া যাচ্ছিল। স্থানীয়দের দাবি, প্রচণ্ড গতিতে যাওয়ার সময় কামদেবপুরে গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারের একটি সিমেন্টের পোস্টে সজোরে ধাক্কা মেরে নয়ানজুলিতে পড়ে উলটে যায়। আশপাশের লোকজন দৌড়ে আসেন।
আবগারি দপ্তরের একদল আধিকারিক ওই সময় দিল্লি রোড ধরে যাচ্ছিলেন। তাঁরাই স্থানীয়দের নিয়ে প্রথমে উদ্ধারে নামেন। হাত লাগান পথচলতি মানুষও। খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত পড়ুয়াদের চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি, নয়ানজুলিতে গাড়ি যেভাবে উলটে গিয়েছে তাতে আঘাত অনেক বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নয়ানজুলির নরম পাঁকের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় আঘাত কম লেগেছে। তবে অন্য একটি সমস্যা হয়েছে। সেই পাঁক অনেক পড়ুয়ার মুখ দিয়ে শ্বাসনালিতে ঢুকে গিয়েছে। স্থানীয়রা অনেকের মুখের ভিতর থেকে পাঁক বের করে দেন। কিন্তু যাদের শ্বাসনালিতে কাদাজল ঢুকে যায় তাদের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে।
দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অফিস টাইমে গুরুতর আহত পড়ুয়াদের কী করে কলকাতার পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে? এক-একটা সেকেন্ডও যে গুরুত্বপূর্ণ। এগিয়ে আসেন হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব। তিনি সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। সাংসদের পরামর্শেই চুঁচুড়া থেকে পিজি পর্যন্ত গ্রিন করিডর গড়া হয়। দু’টি আলাদা অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে আসা হয় দুই পড়ুয়াকে। ঋষভকে ৪৮ মিনিটে এবং দিব্যাংশুকে ৬৪ মিনিটে নিয়ে আসা হয় পিজির ট্রমা কেয়ারে।
দুর্ঘটনার তদন্তে নেমেছে হুগলির পুলিশ। আইজি ট্রাফিক তন্ময়বাবু জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নেওয়া হয়েছে। যে ‘ইমপ্যাক্ট’ হয়েছে এবং গাড়িটির যে টায়ার মার্ক পাওয়া যাচ্ছে, তাতে পরিষ্কার, গাড়িটির গতি অত্যন্ত বেশি ছিল। গাড়ির স্পিড মার্ক ও গাড়ি সংক্রান্ত পরীক্ষা করবেন বিশেষজ্ঞরা। সমস্ত ঘটনার তদন্ত শেষ হওয়ার পরই প্রকৃত কারণ জানা যাবে।” তবে স্থানীয়রা জানালেন, চুঁচুড়া-ব্যান্ডেলের বহু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়ারা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুলকারে করে দিল্লি রোড হয়ে স্কুলে পৌঁছয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলকারগুলি অতিরিক্ত গতিতে চলে যে স্থানীয়রাও রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.