সন্দীপ চক্রবর্তী ও রাহুল চক্রবর্তী: ঐতিহ্যের ইমারতে এবার ইতিহাসকে ফিরে দেখার পালা। আলো-ধ্বনির নতুন বিপ্লবে মুখরিত হতে চলেছে বাংলার বিপ্লব-সাধনার অন্যতম সূতিকাগার মহাজাতি সদন।সেই ঐতিহ্যমণ্ডিত ভবনটির সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল পাঁচ-ছয় বছর আগে। আট কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারপর্ব সমাপ্ত। এখন ঠিক হয়েছে, লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের মাধ্যমে মহাজাতি সদনের দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরা হবে বাংলার নবজাগরণ থেকে অগ্নিযুগ হয়ে স্বাধীনতা অর্জনের নানা অধ্যায়।
ইতিহাস বলছে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল মহাজাতি সদনের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে ‘হাউস অফ দ্য নেশন’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ১৯৩৯ সালের ১৯ আগস্ট ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কবিগুরু। অনুরোধ করেছিলেন নেতাজি। ১৯৩৭ সালের মে মাসে সুভাষচন্দ্র এলগিন রোডের বাড়িতে অ্যাডভোকেট বন্ধু নৃপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র ও কয়েকজন যুবককে নিয়ে কলকাতার নাগরিকদের সভা সমিতি ডাকার জন্য উপযুক্ত প্রেক্ষাগৃহ গড়ার ডাক দেন। কলকাতা পৌরসংস্থার ৩৮ কাঠা জমির সন্ধান পান সুভাষ। এক টাকা লিজে পৌরসংস্থা জমিটি দেয় নেতাজিকে। কবিগুরুই নামকরণ করেন, মহাজাতি সদন। ১৯৪১ সালে নেতাজির অন্তর্ধানের পরই অবশ্য থমকে যায় নির্মাণকাজ। ব্রিটিশ শাসক লিজ বাতিল করে। যদিও শরৎচন্দ্র বসু মামলা করে তা খারিজ করেন। মাঝে চলে গিয়েছে বিপ্লবীদের গোপন কার্যকলাপের নানা অধ্যায়। আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও এখানেই সেরেছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। প্রতিষ্ঠা হয় ছাত্র পরিষদেরও। স্বাধীনতার পরেই বিধানচন্দ্র রায় সদনের নির্মাণ করেন। রয়েছে গবেষকদের পছন্দের বিধানচন্দ্র গ্রন্থাগারও।
নতুন মহাজাতি সদনের আনাচে-কানাচে নানা চেহারায় প্রথিত থাকবে উজ্জ্বল অতীত। সাহায্য নেওয়া হবে লাইট অ্যান্ড সাউন্ডের। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বাম দিকে থাকে থাকে সাজানো থাকবে নানা মূর্তি। সেগুলি বাংলার বিপ্লবীদের। বাঙালি বিপ্লবীদের সংগ্রামের অধ্যায় ফাইবারের মূর্তির মাধ্যমে ব্যক্ত হয়ে উঠবে। চারটি বিশাল হলঘরে আলো-সুরের ঝরনা ধারায় পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা অধ্যায়। প্রত্যেকটি শো হবে নির্দিষ্ট সময়ে। ১৫ বা ২০ মিনিটের সেই শো তুলে ধরবে গর্বের দিনগুলি।
মহাজাতি সদনকে আরও আধুনিক সংগ্রহশালার তকমা দিতে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। যে কারণে এখনই বাইরের সংস্কার তো হয়েছে, নিরাপত্তার খাতিরে প্রতিটি আনাচে-কানাচে বসেছে ক্লোজ সার্কিট টিভি। উপরের তলার হলঘরে অন্তত ৩০-৩৫ জন একসঙ্গে বসে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড অনুষ্ঠান যাতে দেখতে পারেন, তার ব্যবস্থা হবে। একটিতে দেখানো হবে নবজাগরণের অধ্যায়। যেখানে থাকবেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর। আরেকটিতে ধরা পড়বে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা ও বাঙালির দারুণ অধ্যায়। নেতাজি, স্বামীজি ও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলাদাভাবে আলো-ধ্বনির অনুষ্ঠানও থাকবে। ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই তোরণ থাকবে। বাইরের আলোকজ্জ্বল চেহারায় আলাদাভাবে ধরা দেবে এই ঐতিহ্যবাহী সদন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.