অর্ণব আইচ: করোনা ভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত চিন। চিনের বাসিন্দাদের চিকিৎসায় এগিয়ে এলেন কলকাতার চিনারা। তাঁরাই চাঁদা তুলে চিনে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠালেন চিনা দূতাবাসের মাধ্যমে। পাঠানো হয়েছে প্রচুর মাস্কও।
সোমবার কলকাতার চিনা কনসাল জেনারেল ঝা লিইউ জানান, ট্যাংরা ও টেরিটি বাজার থেকে চাঁদা তুলে কলকাতার চিনারা করোনা আক্রান্তদের সাহায্য করেছেন। তাঁদের চাঁদার টাকার পরিমাণ যতই হোক না কেন, তাঁরা যে চিনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে এসেছেন, এটাই প্রশংসনীয়। ট্যাংরা ও টেরিটি বাজার সূত্রের খবর, প্রায় ১৬ লাখ টাকা চাঁদা তুলে উঠিয়েছেন কলকাতার চিনারা। তার সিংহভাগই উঠেছে ট্যাংরা থেকে। টেরিটি বাজারের চিনারাও দিয়েছেন চাঁদা। ব্যবসায়ী ছাড়াও যাঁরা চাকরি করেন, প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে চাঁদা দিয়েছেন। কলকাতার চিনাদের মতে, তাঁরা পুরুষানুক্রমে কলকাতায় থাকলেও মূলকে তাঁরা ভোলেননি। এখনও তাঁদের আত্মীয়রা চিনে থাকেন। অনেকের সঙ্গেই তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। প্রত্যেকের কথা ভেবেই এই চাঁদা তুলেছেন তাঁরা।
এদিন কলকাতা প্রেস ক্লাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে রক্ষক ফাউন্ডেশনের কর্ণধার চৈতালি দাস একটি প্রার্থনাসভার আয়োজন করেন। এই প্রার্থনাসভায় উপস্থিত ছিলেন ড. অরুণজ্যোতি ভিক্ষু, স্যামুয়েল পবন রাজু, সতনাম সিং আলুওয়ালিয়া, ওয়াইজ আলম ও অন্য ধর্মগুরুরা। এই সভায় কলকাতার চিনা কনসাল জেনারেল ঝা লিইউ জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা কমছে। এখনও যে কতজন করোনা আক্রান্ত রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই উহান শহরে। নতুন করে করোনা ধরা পড়লেও তার আক্রান্তের সংখ্যা অত্যন্ত কম।
চিনা কনসাল জেনারেলের দাবি, এখনও পর্যন্ত চিনে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৯১৫ জনের। কিন্তু ৪৪ হাজার জনের বেশি মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে এসেছেন। সারা চিন জুড়ে ৩৩০টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এই টিমে রয়েছেন ৪১ হাজার ৬০০ জন। তাঁদের মধ্য ৬০ শতাংশই নার্স। ভারতীয় ডাক্তাররাও চিকিৎসা করছেন। এ ছাড়াও রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তাঁদের একান্ত প্রচেষ্টায় করোনা ভাইরাস এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। চিনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে কয়েকটি পরিসংখ্যান ও চিত্রলেখা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর হার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সোজা লাইনেই রয়েছে। তা কখনও বিশেষ বাড়েনি বা কমেনি। ১২ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে করোনা আক্রান্তের হার ছিল সবথেকে বেশি। এর পর তা ক্রমে নিচের দিকে। অনেকেই দ্রুত সেরে উঠছেন।
গুজব ছড়িয়েছে যে, চিনের একটি গবেষণাগার থেকে পরীক্ষার সময়ই ছড়িয়ে পড়েছে করোনার জীবাণু। এই বিষয়ে চিনের কনসাল জেনারেলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ষড়যন্ত্র করেই এই গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তার কোনও ভিত্তি নেই। খাদ্যাভ্যাসের কারণে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে, এটিও কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা দেখতে হবে। তবে করোনা ছড়িয়েছে জনগণের ভিড়ের কারণে। ভিড়ের মধ্যেই একজনের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়িয়েছে এই রোগ। প্রাথমিকভাবে করোনার জন্য ব্যবসা ও কাজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে চিনে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিনা কনসাল জেনারেল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.