ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কালো ধোঁয়ায় ভরে উঠেছে ছাদ। ঘরের বাইরে বের হওয়ার পরই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ‘সিংজি’র। সিঁড়ির দিকে পা বাড়ানোর আগেই দেখলেন খাঁচার ভিতর কষ্টে ছটফট করছে আদরের পোষা পাখিটা। মনে হল, যদি আগুন গ্রাস করে তাঁদের ঘরগুলোকে। তাঁরা না হয় পালিয়ে বাঁচলেন। কিন্তু খাঁচার পাখি যে বাঁচবে না। খাঁচার দরজা খুলে সাধের টিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এলেন এম কে সিং। রাতের অন্ধকারেই মিলিয়ে গেল পোষা পাখি।
[মর্গে উপচে পড়ছে বেওয়ারিশ লাশ, কাঠগড়ায় চুঁচুড়ার হাসপাতাল]
বাগরি মার্কেটের বিশালাকার ছাদের একপাশে সার দিয়ে বাঁধা ঘর। আবাসন বললেই চলে। তাতে প্রায় কুড়িটি পরিবারের বাস। পরিবারের লোকেদের কেউ বাগরি মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষী, কেউ বা লিফটম্যান, কেউ ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। গভীর রাতে ঘুমে মগ্ন তাঁরা। এর মধ্যেই পোড়া গন্ধটা নাকে আসতে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল ব্রিজেশ সিংয়ের। ঘর থেকে বেরিয়ে মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখেন, নিচ থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া। ততক্ষণে নিচ থেকে শোনা যাচ্ছে চিৎকার। ব্রিজেশেরই প্রতিবেশী অশোক তিওয়ারি, রামেশ্বর তিওয়ারিরা চিৎকার করতে করতে উপরে উঠছেন। অসুস্থ ব্রিজেশের আর বোঝার কিছু ছিল না। তিনি চিৎকার করে সতর্ক করতে শুরু করেন প্রতিবেশীদের। রাত পৌনে তিনটের সময় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন প্রায় ২০টি পরিবার। ততক্ষণে অশোক, রামেশ্বররা উঠে এসেছেন ছাদে। চিৎকার করে তাঁরা খালি হতে বলছেন প্রত্যেককে। সেই চিৎকার শুনে কাঁচা ঘুম ভেঙে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন অন্যরাও। প্রত্যেকটি পরিবারেই রয়েছেন মহিলা ও শিশু। তাঁদের ঘুম ভাঙার পর দেখেন, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে ছাদের অংশ।
কয়েকজন বাসিন্দা দেখেন, আগুনের শিখা উঠছে ছাদের দিকে।আতঙ্ক ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। নামার জন্য পড়ে যায় হুড়োহুড়ি। আতঙ্ক এতটাই যে, অনেকে দরজা বন্ধ করার সময়টুকুও পাননি। জুতো গলালেও যদি দেরি হয়ে যায়? তাই জুতো ফেলে রেখে খালি পায়েই দৌড় লাগিয়েছেন কয়েকজন। মন্দিরের সামনে দিয়ে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে তাঁদের নাকে আসে পোড়া গন্ধ। বুঝতে পারছিলেন না, সামনের সিঁড়ি দিয়ে নামলে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে কোনও বিপদের সামনে পড়বেন কি না। তাই ছাদের অন্য প্রান্তের সিঁড়ি দিয়ে অন্ধকারের মধে্যই কোনওমতে নেমে বাইরে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন তাঁরা। বেরিয়ে না হয় এলেন, কিন্তু মাথা গুঁজবেন কোথায়? কারও সারাদিন কেটেছে ফুটপাথে ঘুরে। আবার কেউ চলে গিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। জামাকাপড় গুছিয়ে নেওয়ার সময় পাননি অনেকে। আবার ছাত্রছাত্রীরা সঙ্গে নিতে পারেনি স্কুলের বইখাতা। এখনও বাসস্থান নিয়ে অনিশ্চিত তাঁরা। অগ্নিদগ্ধ বাড়িটিতে আর তাঁরা থাকতে পারবেন কি না, তা জানে না বাগরি মার্কেটের কর্মীদের পরিবার।
[১০০ টাকার ডিওতে জতুগৃহ কোটি টাকার বাগরি!]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.