ফাইল ছবি।
নব্যেন্দু হাজরা: সপরিবার রেস্তরাঁয় গিয়ে শেষ কবে পেটপুরে খেয়েছেন বিরিয়ানি, চাঁপ, রেজালা! নাঃ, মনে নেই তো! স্বাভাবিক। লকডাউনের চাপে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কেউ কেউ অবশ্য ভাবছেন লকডাউন উঠলেই আবার প্রিয় রেস্তরাঁয় গিয়ে চেটেপুটে সাঁটিয়ে আসবেন মোগলাই বা চাইনিজ। আর ফেসবুকে স্টেটাস ঝোলাবেন, আফটার লকডাউন লিখে রেস্টুরেন্টের নাম।
লকডাউন মিটলে ক’টা হোটেল-রেস্তরাঁ-ক্যাফে খুলবে, তা কে জানে! তথ্য বলছে, একেবারে ভেন্টিলেশনে হোটেল-রেস্তরাঁ শিল্প। সেখান থেকে বের হওয়া বেশ শক্ত। দেশজোড়া লকডাউনে পর্যটন ব্যবসার মতোই ক্ষতি হয়েছে এই ব্যবসায়ও। ছোট, বড়, মাঝারি হোটেল থেকে হালফিলের রেস্তরাঁ, বার, ক্যাফে বা পাব, ক্ষতির বোঝা সামলে কতজন ব্যবসায় ফিরবেন তা নিয়ে সংশয়ে হোটেল ব্যবসায়ীরাই। হোটেল মালিকদের দাবি, ইতিমধ্যেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে ২৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। যত দিন যাবে তা আরও বাড়বে। এই ক্ষতি পুষিয়ে কীভাবে আবার ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াবে তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে তাঁরা।
মালিকদের দাবি, এই মহামারী কাটানোর পর মানুষের হাতে টাকা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে। ফলে এতদিন যাঁরা হোটেল-রেস্তরাঁয় নিয়ম করে খেয়ে বেড়াতেন, তাঁরাও খরচে লাগাম টানবেন। লোকে কেনাকাটা, বেড়ানো, সবই যেমন কমাবেন, তেমনই কমাবেন রেস্তরাঁয় খাওয়াদাওয়াও। অথচ ক্রেতার আশায় দোকান সাজিয়ে বসতে হবে তাঁদের। কিন্তু দিনের পর দিন তো কেউ ক্ষতির বহর বাড়াবেন না। ফলে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনও দিন।
জানা গিয়েছে, রাজ্যে ছোট, বড়, মাঝারি মিলিয়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ হাজার রেস্তরাঁ এবং বার রয়েছে। আর হোটেল রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার। এছাড়াও রয়েছে আরও রাস্তার ছোটখাটো রেস্তরাঁ। সেগুলো এই তালিকায় নেই। হোটেল মালিকদের বক্তব্য, আগামী কয়েক মাস এমনিতেই কাস্টমার কমে যাবে। বিক্রিবাটাও হবে না। কিন্তু কর্মীদের মাইনে থেকে এসটাব্লিশমেন্ট কস্ট বাড়তেই থাকবে। ফলে একটা সময়ের পর রেস্তরাঁ বা ক্যাফে চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। টাকা খরচ করার প্রবৃত্তি অনেকটাই কেড়ে নেবে লকডাউন। কমবে শপিং মল, রেস্তরাঁয় যাওয়া। হোটেল মালিকদের দাবি, লকডাউন শেষে অন্তত ৩০ শতাংশ মাঝারি হোটেল-রেস্তরাঁ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে তাঁরা ব্যবসায় ফিরবেন কি না সন্দেহ। হোটেল অ্যাসোসিয়েশনও বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তিত। সংগঠনের এক সদস্যের কথায়, লকডাউন মেটার পর হোটেল খুলতে দিলেও তাতে একগুচ্ছের নিয়মকানুন থাকবে। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং রাখতে হবে। যেখানে একসঙ্গে ১০০ জন বসে খেতে পারতেন, সেখানেই বড়জোড় ৪০ জন বসতে পারবেন। তাছাড়া এই নিয়মকানুন মেনে কতজন রেস্তরাঁমুখী হবেন, তাও দেখার।
হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া ইস্টার্ন রিজিওনের সভাপতি, সুদেশ পোদ্দার বলেন, “হোটেল ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। লকডাউনের ধাক্কা সামলে কত হোটেল–রেস্তরাঁ ফের খুলে আগের মতো ব্যবসা করবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। অনেকে তো বন্ধও করে দিতে পারেন। আমরা শীঘ্র ফোনেই সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে একটা আলোচনায় বসব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.