দীপঙ্কর মণ্ডল: মেধার অভাব মেগাসিটিতে। উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের দৌড়ে কলকাতাকে টেক্কা দিল মফস্বল। মেধাতালিকার প্রথম তিনে বারোজন। তার মধ্যে কলকাতার ভাঁড়ার শূন্য। কলকাতাকে টপকে প্রথম তিনে মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনার অশ্বিণী নগর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, কৃষ্ণনগর, হুগলির শ্রীরামপুর, ডানকুনির কৃতীরা। সে কারণে ১৩৭ জনের মেধাতালিকায় ১০ জন মোটে তিলোত্তমার। মাধ্যমিকের মতো উচ্চমাধ্যমিকেও কলকাতার পিছিয়ে পরাকে ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। কারও মতে, খুব ভাল ফলের জন্য নিবিড় মনোযোগ ও খুঁটিয়ে পড়ার অভ্যেস দরকার। তবে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে পিছিয়ে পড়ার পিছনে সরকারি স্কুলে উৎকৃষ্ট মেধার অভাব। কারণ এ শহরের ভাল ছেলেমেয়েরা চলে যাচ্ছে আইসিএসই, সিবিএসই বোর্ডের স্কুলে। জেলায় সেই সুযোগ নেই। ফলে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকে মেধাতালিকার দখল নিচ্ছে জেলা। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে কলকাতা। ফি বছর জেলার অনামী, অখ্যাত স্কুল ভাল ফল করছে আর কলকাতার তথাকথিত নামী-দামি স্কুলগুলি পিছিয়ে পড়ছে।
এবার উচ্চমাধ্যমিকে যুগ্মভাবে প্রথম হয়েছে বীরভূমের শোভন মণ্ডল, কোচবিহারের রাজর্ষি বর্মণ। কলকাতার পার্শ্ববর্তী এলাকা বাগুইআটির অশ্বিনীনগর থেকে দ্বিতীয় স্থানে সংযুক্তা বসু। যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হয়েছে কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ঋতম নাথ। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬। মেধাতালিকা অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের মহম্মদ মাসুম আখতার। সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র দারিদ্রকে জয় করেই জায়গা করে নিয়েছেন মেধাতালিকায়। তৃতীয় হয়েছেন উত্তপাড়ার নবগ্রাম হীরালাল পাল বালিকা বিদ্যালয়ের বর্ণালী ঘোষ। ৪৯৪ নম্বর পাওয়া বর্ণালী শতকরা ৯৮.৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। তৃতীয় হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার মৃন্ময় মণ্ডল। তাঁদের সঙ্গেই এক আসনে রিষড়ার সুপ্রিয় শীল। মাহেশ শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম বিদ্যালয়ের সুপ্রিয়র কৃতিত্বে আপ্লুত শিক্ষকরা। মেধাতালিকায় ১৩৭ জনের তালিকায় দূরবীন দিয়েই খুঁজতে হচ্ছে কলকাতাকে। পাশের হারেও কলকাতার থেকে অনেক এগিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর।
কলকাতার জনা কয়েক কৃতীদের মধ্যে রয়েছে পঞ্চম স্থানাধিকারী সত্যম কর। লস্করপুরের সত্যমের প্রাপ্ত নম্বর ৪৯১। পড়ত যাদবপুর বিদ্যাপীঠে। দুর্গানগরের সূর্যতপ বসু (পঞ্চম) । নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র সূর্যতপ পেয়েছে ৪৯১। দীর্ঘ দিন ধরেই উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশের তালিকায় হিন্দু, হেয়ার, বেথুন, বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট, পাঠভবন, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল, বাগবাজার মাল্টিপারপাস, নব নালন্দা, লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠের মত স্কুলগুলির নাম শোনা যায় না। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানিয়েছেন, “ভাল ফল করতে হলে পড়াশোনাটাও সেই উচ্চতায় চাই। পড়ার কোনও বিকল্প নেই। স্কুল চেষ্টা করলেও, ব্যক্তিগত স্তরে কলকাতার ছাত্র বা ছাত্রীটির খামতি রয়ে যাচ্ছে।” বেথুন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী জানিয়েছেন, “মূলত বেসরকারি স্কুলে ভর্তির পর লটারির মাধ্যমে যাদের পাই, তাদের শূন্য থেকে শুরু করে ৫৪০ বা ৫৫০ পাবে, এমন একটা অবস্থায় নিয়ে আসি। তার বেশি পেতে যে মেধা দরকার, সেটার অভাব।” বিষয়টিকে অবশ্য এভাবে দেখতে রাজি নন হেয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীল দাস এবং বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রবালরঞ্জন সেনগুপ্ত। প্রবালবাবু বলেছেন, “এটা একটা পর্যায়। যা কেটে যাবে। উচ্চমাধ্যমিককে হয়তো এরা ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেছে, ভাল ফল হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.