স্টাফ রিপোর্টার: “অত্যন্ত আতঙ্কে রয়েছি। এখানে একেবারে বন্দি। দুটো বাচ্চা নিয়ে আমি একা পড়ে রয়েছি এখানে। নিজের কেউ নেই। নিজের দেশে ফেরত যেতে চাই। কিন্তু বুঝতেই পারছি না কাকে যোগাযোগ করব। কী করব। কাকে বলব বুঝতেই পারছি না। দুটো বাচ্চা নিয়ে আমি একা পড়ে রয়েছি এখানে।” ভিডিও কলে হাউ হাউ করে কাঁদছেন এক যুবতী। কলকাতার মেয়ে সঙ্ঘমিত্রা দফাদার। দুই সন্তান নিয়ে এখন আটকে আছেন আফগানিস্তানে (Afghanistan)। তালিবান দখলে যেখানে জীবন আর মৃত্যু সমার্থক। প্রাণ বাঁচানোর কান্নায় বিচলিত গোটা রাজ্য।
পেশায় নার্স সঙ্ঘমিত্রা কর্মসূত্রে আফগানিস্তানে যান ২০০২ সালে। আফগানিস্তান তালিবান (Taliban) দখলে যাওয়ার পর আরও অনেকের মতো দুই সন্তান নিয়ে আটকে পড়েছেন সেখানে। আতঙ্কে ঘর থেকে বেরোচ্ছেন না। বাইরে রাস্তায় মর্টার-কালাশনিকভ উঁচিয়ে ঘুরছে তালিবান জঙ্গিরা। যাদের সম্পর্কে অতীত অভিজ্ঞতা ভয়ংকর আফগানবাসীর, বিশেষত মহিলাদের। পরিবার সূত্রে খবর, সঙ্ঘমিত্রাদেবী এখন থাকেন কাবুলের বাইরে।
সেখান থেকে দেশে ফিরতে বারবার ভিডিও কল (Video Call) করছেন সখেরবাজারের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মাকে। শুক্রবার ভিডিও কলে কথা বলার সময় হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেছেন। বলেন, “অত্যন্ত আতঙ্কে রয়েছি। বোঝা যাচ্ছে না কখন কী হবে। বাড়ি থেকে তো বেরোতে পারছি না। যেখানে কাজ করি, সেই জায়গা, অন্য সব কিছু সব বন্ধ। বাড়িতে আটকে রয়েছি। ফেরার তো খুবই ইচ্ছা। আমি এখানে একেবারে বন্দি। আমার এখানে কেউ নেই। আমার এখানে নিজের কেউ নেই। আমি চাই নিজের দেশে ফেরত যেতে। আমার মা-বাবার কাছে ফেরত যেতে। কিন্তু আমি বুঝতেই পারছি না কাকে যোগাযোগ করব। কী করব। কাকে বলব বুঝতেই পারছি না। দুটো বাচ্চা নিয়ে আমি একা পড়ে রয়েছি এখানে।”
উদ্বেগ সঙ্ঘমিত্রার বৃদ্ধ বাবা-মার মুখেও। সঙ্ঘমিত্রার বাবা বলেন, “তিনটে মানুষ একেবারে একা। ফোনে বলছে, পুরোপুরি গৃহবন্দি হয়ে আছে। তালিবানদের কোনও ভরসা নেই। বাইরে বেরলেই কী করবে কেউ জানে না। ওদের অতীত রেকর্ড তো ভয়ংকর। খুব ভয় পাচ্ছি। ওরা পশুর সমান।” একই আতঙ্ক সঙ্ঘমিত্রাদেবীর মায়ের গলায়। তিনি বলেন, “উঠতে বসতে খালি ভাবছি কী হবে। ওর বাবা অসুস্থ। ৮৪ বছর বয়স। সামনে তাই আমার নিজের উৎকণ্ঠাটাও চেপে রাখছি। মেয়েও খালি বলছে আমাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো।” তিনি জানান, ভিসা তো তৈরি। কিন্তু ফিরবে কী করে। কাবুল পর্যন্তই তো পৌঁছতে পারবে না। রেশন তুলে ঘর বন্ধ করে বসে আছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.