ফাইল ছবি
নিরুফা খাতুন: কেন্দ্রীয় সরকার ফান্ড বন্ধ করে দেওয়ায় পুনর্বাসন কেন্দ্র ছাড়তে হয়েছিল। কালিকাপুরে পুরনো ঠিকানার ঠিক পাশে দু’কামরার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে কোনওরকমে মাথা গুঁজে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন রূপান্তরকামীরা। এই ছোট্ট ঘরের মধ্য়ে এখন চলছে হরগৌরীর পুজোর প্রস্তুতি।
কালিকাপুরে বহুতল বাড়িতে রূপান্তরকামীদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। প্রায় ৪০ জন রূপান্তরকামী এখানে থাকতেন। তাঁদের স্বর্নিভর করে তোলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। সেখানেই গত তিন বছর ধরে পুজো করে আসছিলেন রূপান্তরকামীরা। এর আগে অবশ্য গোখেল রোডে তাঁদের পুজো হত। কিন্তু কেন্দ্র অর্থ বন্ধ করে দেওয়ার পর এই পুনর্বাসন কেন্দ্র ছাড়তে হয়। তবে হাল ছাড়েননি গরিমা গৃহের সদস্যরা। পাশেই একটি ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে নিজেরাই স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বছর ছয়ে পা দেবে রূপান্তরকামীদের এই পুজো (Durga Puja 2023)। এখানে দুর্গা প্রতিমা থাকে না। পুজো করা হয় অর্ধনারীশ্বর হরগৌরীকে। প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয় না। গত পুজোয় গরিমা গৃহের জন্য রূপান্তরকামী এক শিল্পী নিজের হাতে হরগৌরীর প্রতিমা তৈরি করে দিয়েছেন। সেই প্রতিমায় পুজো হচ্ছে এবারও। এখানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। দুর্গাপুজোয় নবরাত্রি পালন করেন রূপান্তরকামীরা। এই ন’দিন তাঁরা নিরামিষ খান। মেঝেতে ঘুমোন। পুজোয় বাইরে থেকে পুরোহিত নিয়ে আসা হয় না। বরং নিজেদের সম্প্রদায়ের সদস্যরাই পুরোহিতের দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। ভোগ রান্না ও পরিবেশন সব নিজেরাই করে থাকেন। নিয়ম মেনে কুমারী পুজোও হয়। ফুটপাত ও যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে কুমারী পুজো করেন।
পুজোর দিনগুলিতে এলাকার গরিব, ফুটপাতের বাসিন্দাদের জন্য মণ্ডপে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই পুজো এখন আর শুধু রূপান্তরকামীদের নিয়ে হয় না। এখানে যৌনকর্মী, সমকামী, অ্যাসিড আক্রান্তরাও যোগদান করে থাকেন। সমাজের বিশিষ্ট লোকজন থেকে শুরু করে বিদেশের প্রতিনিধিরাও এই পুজোয় আসেন। গত বছর এই পুজোমণ্ডপে এসে বিয়ে করেছিলেন বিদেশি যুগল।
গরিমা গৃহের ডিরেক্টর রূপান্তরকামী রঞ্জিতা সিনহা বলেন, ‘‘গরিমা গৃহে পুরনো বাড়িটি অনেক বড় ছিল। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো আবাসিক থাকত। কিন্তু কেন্দ্র অর্থ বন্ধ করে দেওয়ায় সেই বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। এখন দু’কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটে ন’জন সদস্য ঠাসাঠাসি করে থাকছেন। পুজোর ক’দিন বাইরে থেকেও আমাদের অনেক ভাইবোন আসেন। তাঁদের কোথায় থাকার জায়গা দেব সেটাই এখন চিন্তার। আসলে এখনও পুজোতে আমাদের মতো মানুষদের গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমরা মণ্ডপে গিয়ে আনন্দ করতে পারি না। আগে আমার নিজের বাড়ি গোখেল রোডে পুজো হত। সকলকে নিয়ে আনন্দ করতে গরিমা গৃহে পুজোর আয়োজন করা হয়। আমাদের পুজোয় রাস্তায় নেমে চাঁদা তোলা হয় না। আত্মীয়-স্বজন শুভাকাঙ্ক্ষীরা সহায়তা করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.