ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: তাঁরা গাড়ি চালান। কিন্তু চোখে ভাল দেখেন না। কয়েকজন আবার আন্দাজেই হাতে নেন স্টিয়ারিং। সামনে থেকেও দেখে তা বোঝা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু স্বাস্থ্য শিবিরে পরীক্ষা চালাতে গিয়েই ট্রাফিক পুলিশের হাতে উঠে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। দৃষ্টিতে সমস্যা থাকার ফলে যাতে দুর্ঘটনা না হয়, তার জন্য প্রয়োজনে চশমার ব্যবস্থাও করছে পুলিশ। এছাড়াও গাড়ি চালানোর ‘টেনশন’ থেকে বেশিরভাগ চালকেরই উচ্চ রক্তচাপ ও সুগারও ধরা পড়েছে।
বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার সময় সুস্থই ছিলেন চালক। হঠাৎই গাড়ি ঘটাল দুর্ঘটনা। তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে যে, গাড়ি চালাতে চালাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় চালকের। তার পরই হয় দুর্ঘটনাটি। আবার একাধিক ঘটনায় ট্যাক্সি বা বাসের চালকের আসন থেকে উদ্ধার হয়েছে চালকের দেহ। জানা গিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। আবার বহু দুর্ঘটনার পর এও দেখা গিয়েছে যে, চালকের চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক না থাকাই দুর্ঘটনার কারণ। কিন্তু সাধারণভাবে চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রায় করাই হয় না। সেই কারণেই ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’র প্রথম দিনেই হাওড়া ব্রিজের কাছে স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করে পুলিশ।
লালবাজারের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাস্থ্য শিবিরের সিদ্ধান্ত নেন হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের ওসি শৌভিক চক্রবর্তী। যেহেতু কলকাতার ট্রাফিকের একটি বড় অংশ হাওড়ায় যায় সেতু দিয়েই, এই অঞ্চলে দিনে কয়েক হাজার অটো, ট্যাক্সি, বাস চলাচল করে, তাই হাওড়া ব্রিজের নিকটতম এলাকাকেই ট্রাফিক পুলিশ বেশি গুরুত্ব দেয়। এই অঞ্চল দিয়ে প্রত্যেকদিনই যাতায়াত করে প্রচুর ভ্যান রিক্সা। বড়বাজার ও পোস্তা অঞ্চলে মাল নিয়ে যাতায়াত করেন ভ্যান চালকরা। তাই এদিন বাস, অটো ও ট্যাক্সির সঙ্গে সঙ্গে ভ্যান রিক্সা চালকদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়।
ট্রাফিক পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এদিন ১০০ জন চালককে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তাঁদের মধ্যে ৩১ জনই চোখে কম দেখেন। তাঁদের চোখের পাওয়ারের সমস্যা রয়েছে। অনেকে আবার দূরের দৃশ্য স্পষ্ট দেখতে পান না। কিন্তু তাঁদের চশমাও নেই। তাই তাঁদের পক্ষে যাতে গাড়ি চালানো বিপজ্জনক না হয়ে ওঠে, তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকেই চশমা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও দেখা গিয়েছে, রক্তের উচ্চচাপ রোগে ভুগছেন ৫২ জন। অতিরিক্ত সুগারে ভুগছেন ৪৬ জন। চিকিৎসকরা ট্রাফিক পুলিশকে জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত ভাবনা চিন্তা থেকেই চালকদের এই রোগ। পাশাপাশি গাড়ির ধোঁয়ায় দূষণের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন বহু চালক। আবার ইসিজি ও অন্যান্য পরীক্ষা করে স্বাস্থ্য শিবিরের চিকিৎসকরা দেখেছেন যে, গাড়ি চালকদের মধ্যে অনেকেই হৃদরোগে ভুগছেন। কিন্তু তাঁরা তা জানেনই না। চালকদের সুবিধার জন্য আরও কয়েকদিন চালানো হবে এই স্বাস্থ্য শিবির। চিকিৎসকদের পক্ষ চালকদের প্রেসক্রিপশন দেওয়া হচ্ছে। অনেককে আবার প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালেও চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা পুলিশ করতে পারে। যাঁরা ওষুধ কিনতে পারবেন না, তাঁদের ওষুধও কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.