ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বালির মধ্যে বল পায়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ফুটবলাররা। উচ্ছ্বাসে ভাসছে হাজার খানেক মানুষ। ভেসে আসছে সমুদ্রের গর্জন। শহরে বসে এমন দৃশ্য দেখতে কার না ভাল লাগে?
সে আবার কী? খাস কলকাতায় সমুদ্র এল কোথা থেকে! তাজ্জব বনে গেলেন নিশ্চয়ই। তবে এমনই আয়োজন হতে চলেছে শহরে। নিউটাউন স্টেডিয়ামে এবার সৈকতের বালি আর বিচ ফুটবল চাক্ষুষ করতে তৈরি হয়ে যান। সৌজন্য রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্র। নিউটাউন বাসস্ট্যান্ডের পিছনে অবস্থিত স্টেডিয়ামে এবার বসছে কলকাতার প্রথম বিচ ফুটবলের আসর। মাঠের উপর সৈকতের বালি ছড়িয়ে হবে এই বন্দোবস্ত। অতিরিক্ত সংযোজন সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন। পুরোটাই কৃত্রিম উপায়ে। এমন জিনিস বাংলা তথা ভূ-ভারতেও হয়নি বলে জানালেন মদনবাবু। বালির উপর বল পায়ে খেলতে দেখা যাবে দেশের বিখ্যাত বিচ ফুটবলারদের। থাকবে বাংলার টিমও। সবমিলিয়ে মনোরঞ্জনের অভিনব পন্থা বের করেছেন মদন মিত্র।
রবিবারই মদন মিত্র সাংবাদিক সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। জানিয়েছেন, এই উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়তা করেছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও অরূপ বিশ্বাস। স্টেডিয়াম দেওয়ার সম্মতি দিয়েছেন হিডকোর সিএমডি দেবাশিস সেন। মিলেছে সর্বভারতীয় ফুটল ফেডারেশন ও আইএফএ-র স্বীকৃতিও। তাই বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে ৯ মে বল গড়াবে বালিতে। টুর্নামেন্ট চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। চারদিন ব্যাপী এই বিচ ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলবে মোট ১৬টি দল। তার মধ্যে বাংলার ১০টি টিম। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬টি টিম আসবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। পুরস্কারমূল্যও বেশ আকর্ষণীয়। মোট ২.১৫ লক্ষ টাকার পুরস্কারমূল্য ঘোষণা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, তাজপুরে বিচ ফুটবলের আসর বসাতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী। তাঁর নিজের কথায়, “এমন খেলা আগে কখনও হয়নি। কেউ করেনি। সৈকতের সাদা বালিতে বিশ্বের বড় ফুটবলাররা খেলবেন।” গত বছরের নভেম্বরের ৩ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত সেই বিচ ফুটবলে উড়িয়ে আনার কথা ছিল বিশ্বের তাবড় আন্তর্জাতিক ফুটবলারদের। সেই কথা কানে যেতেই ফিফার এক প্রতিনিধির ফোন মদনকে। তাঁর কথায়, “বিষয়টা আমি জানতাম না। এত বড় খেলোয়াড়দের আনতে ফিফার অনুমোদন লাগে। ফিফার নিয়ম আমি অমান্য করতে পারি না।” তাই এবার শুধুমাত্র দেশের ফুটবলারদের নিয়েই টুর্নামেন্ট করতে উদ্যোগ নিয়েছেন মদন মিত্র। প্রতিযোগিতা স্পনসর করছে অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া।
মদনবাবু জানিয়েছেন, সমস্ত ফুটবলারদের স্টেডিয়ামে ঘুরিয়ে দেখানো হবে। একটা বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার মতো পরিবেশ তৈরি করা হবে। কলকাতা তথা বাংলার মানুষ এমন জিনিস আগে কোনওদিন দেখেননি বলে দাবি তাঁর। উল্লেখ্য, সারা দুনিয়াতেও এখন বিচ ফুটবলের চরিত্র বদলেছে। এখন শুধুই সৈকতে সীমাবদ্ধ নেই এমন খেলা। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া-সহ ইউরোপের একাধিক দেশে এখন ইন্ডোর বিচ ফুটবলের আয়োজন হয়। ইন্ডোর স্টেডিয়ামেই বালির উপর বল পায়ে দৌড়তে দেখা যায় ফুটবলারদের। কলকাতাতে ইন্ডোর নাহলেও মাঠের মধ্যে কৃত্রিম সৈকতের পরিবেশ তৈরি করে বিচ ফুটবল অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন মদন মিত্র। তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত নতুনত্ব উপহার দিতে পেরে। তাঁর এই উদ্যোগে বলাবাহুল্য একটা অন্যধরনের টুর্নামেন্ট দেখতে পাবে শহরবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.