অমানবিকতার নজির। চিত্র প্রতীকী।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অমানবিকতার নজির দেখাল বিয়েবাড়ি। মাঝরাতে বিয়ে দিতে এসে বিয়ে বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন পুরোহিত। চারহাত যিনি এক করলেন, বিয়ের পর তাঁর আর কোনও খোঁজ করল না কনের পরিবার। কনের বাড়ির অবহেলায় এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল ওই পুরোহিতের। গত সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে বেলঘরিয়ার যতীন দাস নগরে। মৃত পুরোহিতের নাম প্রণব চক্রবর্তী। ওইদিন রাতে তাঁর ছেলেও গিয়েছিলেন পৌরহিত্যের কাজে। তিনি গভীররাতে বাড়ি ফিরে দেখেন, বাবা আসেননি। নিজেই চলে যান বিয়েবাড়িতে। অসুস্থ প্রণববাবুকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাগতা নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। দুদিন বাদে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কনের পরিবারের বিরুদ্ধে কোনও রকম অভিযোগ দায়ের করেননি মৃতের ছেলে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এই অমানবিকতা মেনে নিতে পারছেন না। পরিবারটিকে যোগ্য শাস্তি দিতে মার্চ পিটিশন করে থানায় যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, রাত বারোটা নাগাদ লগ্ন ছিল। ছেলে বাবা একসঙ্গেই পৌরহিত্যের কাজে বেরিয়েছিলেন। দূরের পাড়ায় ছেলের যজমানির কাজ পড়েছিল। আর একই পাড়ায় বিয়ে দিতে যান প্রণববাবু। ছাদনাতলাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ততক্ষণে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। অভিযোগ, যন্ত্রণায় ছটফট করলেও কেউ সেদিকে খেয়াল করেননি। এমনকী, বিয়েবাড়িতে চিকিৎসকের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। খবর দেওয়া হয়নি পুরোহিতের বাড়িতেও। যদিও বিয়েবাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই ছিল পুরোহিতের বাড়ি। এদিকে বিয়ের কাজ সেরে ততক্ষণে বাড়ি ফিরে এসেছেন প্রণববাবুর ছেলে। তিনি বাবাকে বাড়িতে না দেখে তাঁর মোবাইলে ফোন করেন। বিয়েবাড়িরই একজন ফোন ধরে জানিয়ে দেন বাবার অসুস্থতার খবর। তড়িঘড়ি বিয়েবাড়িতে পৌঁছে তিনি দেখেন অন্ধকারে ঢেকেছে বিয়েবাড়ি। আশপাশে একটিও জনপ্রাণী নেই। ছাদনাতলার কিছুটা দূরে মেঝেতে পড়ে ছটফট করছেন প্রণববাবু। পরনে শুধু অন্তর্বাস। সারা গায়ে মাটি লেগে আছে। সঙ্গেসঙ্গে নিকটবর্তী নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রণবাবু। প্রায় ঘণ্টাদুয়েক আগে ঘটনাটি ঘটেছে। ফলত তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু না হওয়ায় রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুদিন হাসপাতালে কাটানোর পর গত বুধবার প্রণববাবুর মৃত্যু হয়। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। সকলের একটা প্রশ্ন, আর একটু আগে চিকিৎসা শুরু হলে বেঁচে যেতে পারতেন ওই পুরোহিত। যদি কনের বাড়ির লোকজন একটু মানবিকতা দেখাতো তাহলে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি এড়ানো যেত।
আজ সকালেই অশৌচের পোশাকে কনের বাড়িতে যান পুরোহিতের ছেলে। গোটা ঘটনায় তিনি একপ্রকার বাকরুদ্ধ। অন্যদিকে অত্যন্ত স্বার্থপরের মতো পুরোহিতের মৃত্যুর দায় এড়াতে সচেষ্ট অভিযুক্ত কনের পরিবার। নববধূর দাবি, বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাঁরা খেতে চলে যান। পুরোহিত কি অবস্থায় ছিলেন, দেখেননি। স্থানীয়দের প্রশ্ন, কনের কাকা একজন চিকিৎসক। যে বাড়িতে চিকিৎসক রয়েছে সেই বাড়িতে কেন অসুস্থ ব্যক্তি ন্যূনতম পরিষেবা পাবেন না? তার উপরে যে সে কেউ নন। যিনি চারহাত এক করছেন, সেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁর প্রতিই দেখানো হল অবহেলা। এই প্রসঙ্গে কনের দাবি, কাকার সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের কোনও সম্পর্ক নেই। তবুও পুরোহিতমশাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ডাকা হয়। তিনি নাকি আসতে রাজি হননি। কাকা আসেননি বলে বিনা চিকিৎসায় পুরোহিতকে ফেলে রেখে দায় এড়াতে পারে না কনের পরিবার। এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। যদি কেউ যেখানে রাস্তায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহল পথচারীরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে বিয়েবাড়িতে পুরোহিতের সঙ্গে ঘটনাটি ঘটল। আর কেউ দেখতেই পেল না? উঠছে প্রশ্ন। সঙ্গে কনের পরিবারের উপযুক্ত শাস্তির দাবিও তোলা হয়েছে। শাস্তি যাতে হয়. সেজন্য মার্চ পিটিশন করে থানায় জমা করারও হমকি দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.