অর্ণব আইচ: তারা শান্ত। তারা সহনশীল। তাই তারা ‘লক্ষ্মী’। তাদের পিঠে চড়লে ঝুঁকির সম্ভাবনা কম।
তাই কলকাতা পুলিশে নতুন নিয়োগ হওয়া প্রায় ৩৫০ পুলিশ অফিসারের প্রশিক্ষণের জন্য দশটি ‘লক্ষ্মী ঘোড়া’ বেছে নিল লালবাজার। এই নতুন পুলিশ অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্যই নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে আলিপুর বডিগার্ড লাইনের ‘প্যাডক’। পুলিশ জানিয়েছে, এখন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ হয় হাওড়ার ডুমুরজলার কাছে কলকাতা পুলিশ অ্যাকাডেমিতে। প্রত্যেক পুলিশ অফিসারের ক্ষেত্রেই ‘হর্স রাইডিং’ বা ঘোড়ায় চড়া শেখা আবশ্যিক। যেহেতু হাওড়ার অ্যাকাডেমিতে ঘোড়ায় চড়া শেখার ব্যবস্থা নেই, তাই আলিপুর বডিগার্ড লাইনেই হয় এই প্রশিক্ষণ। বডিগার্ড লাইনের আস্তাবলে রয়েছে কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের ২৮টি ঘোড়া। তাদের মধ্যে ১২টি অবসরপ্রাপ্ত, ৬টি অসুস্থ। বাকি দশটি ‘কর্মরত’। তাদের কখনও বা পোলোর মতো খেলাধুলোর কাজেও লাগানো হয়। এখানে নতুন ঘোড়াদেরও পুলিশের চাকরির আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যদিও নতুন ঘোড়া এখন নেই।
গত বছর থেকেই এই সাড়ে তিনশো নতুন পুরুষ ও মহিলা সাব ইন্সপেক্টর, সার্জেন্টের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। জানুয়ারি মাসের শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে শুরু হবে ঘোড়ায় চড়ার প্রশিক্ষণ। দিনে ৩০ জন করে অফিসার প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। তিন মাস ধরে চলবে এই প্রশিক্ষণ। পুলিশের মতে, এই প্রশিক্ষণের বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ঘোড়াই। কারণ, কিছু ঘোড়ার সওয়ারি পছন্দ না হলে পিঠ থেকে ফেলে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। আবার কোনওটি বা সওয়ারি পিঠে উঠলেই দৌড়তে শুরু করে। কিন্তু ঘোড়া চড়ার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে পোষ্যটির পিঠের উপর ওঠা ও নামা। তাই কোনও ঘোড়া বেগড়বাই করলে নতুন সওয়ারির পক্ষে তা ভয়ঙ্কর হতে পারে।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের আধিকারিকদের মতে, আলিপুর বডিগার্ড লাইনে দশটি কর্মরত ঘোড়ার মধ্যে পাঁচটি অত্যন্ত শান্ত। কিন্তু বাকি পাঁচটির আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের সদর দপ্তর লাগোয়া আস্তাবলের পাঁচ বাসিন্দাকে শনাক্ত করছে পুলিশ। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এখান থেকে ‘লক্ষ্মী ঘোড়া’ হিসাবে ডাস্টি লেগ, বারমিনি, ওসোয়াল, রুক্মিনী ও হিস্টোরিয়ানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন পুরস্কারপ্রাপ্তও। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাদের সদর দপ্তর থেকে আলিপুর বডিগার্ড লাইনে নিয়ে যাওয়ার। তার বদলে বডিগার্ড থেকে পাঁচ ঘোড়াকে নিয়ে আসা হবে সদর দপ্তরে। এই তিনমাস এরা ময়দান ও রাস্তায় ডিউটি করবে।
বডিগার্ডে থাকা দশটি ‘লক্ষ্মী ঘোড়া’ আগামী তিন মাস প্রশিক্ষণের কাজেই থাকবে। তবু নতুন প্রশিক্ষণরত অফিসারদের জন্য ঝুঁকি নিতে চায় না কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষ। তাই আলিপুর বডিগার্ড লাইনের যে প্যাডকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তার মাটিকে নরম করার কাজ শুরু হয়েছে। মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বালি ফেলা হচ্ছে, যাতে কেউ ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলেও সহজে আহত না হন। এ ছাড়াও আমফানে ভেঙে যাওয়া প্যাডকের পাঁচিলও সারানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.