অর্ণব আইচ: ভোটের আগের দিন থেকেই কলকাতার ৫৭৫ জন ‘ট্রাবল মঙ্গার’-এর উপর নজর পুলিশের। ওই তালিকার মধ্যে কেউ যাতে পোলিং এজেন্ট না হয়, তা-ও খতিয়ে দেখছেন কলকাতার প্রত্যেকটি থানার আধিকারিকরা। একই সঙ্গে কলকাতার প্রত্যেকটি হোটেল ও অনুষ্ঠান বাড়ির উপর শুরু হয়েছে পুলিশের নজরদারি।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী কোনও ‘ট্রাবল মঙ্গার’বা যাদের বিরুদ্ধে আগে ভোটে গোলমালের অভিযোগ রয়েছে, তারা যেন কোনওমতেই কোনও বুথে রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্ট না হয়। সেইমতো প্রত্যেকটি থানা এলাকার ‘ট্রাবল মঙ্গার’-এর তালিকা পুলিশ তৈরি করেছে। সেই অনুযায়ী ভাঙড়-সহ কলকাতার দশটি ডিভিশনে ট্রাবল মঙ্গার-এর তালিকায় রয়েছে ৫৭৫ জন। তাদের কেউ যাতে ভোটের দিন ইচ্ছামতো যেখানে সেখানে ঘুরে না বেড়ায়, সেদিকে বিশেষ নজর রাখছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। একদিন আগে থেকেই তাদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখা হচ্ছে। তাদের যে কেন্দ্রে ভোট রয়েছে, তার বাইরে অন্য কেন্দ্রে গেলেই তাদের আটক করা হবে। এ ছাড়াও ভোটের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিছু ‘দুষ্কৃতী’র তালিকা নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সেই তালিকা ইতিমধ্যেই লালবাজারকে দিয়েছে। ওই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সত্যিই এলাকায় কোনও গোলমালের অভিযোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে পুলিশ রিপোর্ট পাঠাচ্ছে। ভোটের আগে শহরের কোনও হোটেল বা বিয়েবাড়িতে অন্য এলাকার রাজনৈতিক দলের কর্মীরা আশ্রয় নিয়েছেন কি না, তা জানতে চলছে পুলিশের তল্লাশি। কলকাতার নির্মীয়মাণ বাড়িগুলির দিকেও রয়েছে পুলিশের নজর। যে ব্যক্তি যে এলাকার ভোটার নন, আগের রাতে তিনিও সেই এলাকায় থাকতে পারবেন না। কেউ ধরা পড়লে তাঁকে আটক করতে পারবে পুলিশ। এদিকে, ভোটের দিন কলকাতা পুলিশ একটি বিশেষ হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করছে। কোনও ভোটকেন্দ্রে গোলমালের খবর পেলে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সেখানে হাজির হবে পুলিশকর্তাদের টিম। জায়গাটির ছবি ও ভিডিও তুলে তা গ্রুপে পাঠিয়ে দেবেন পুলিশ আধিকারিকরা। সেই ছবি ও ভিডিও-সহ রিপোর্ট পৌঁছে যাবে লালবাজার ও ক্রমে নির্বাচন কমিশনের কাছে।
এদিকে, শনিবার ভোটের দিন কলকাতায় রাস্তায় থাকছে অন্তত ১৩ হাজার পুলিশ। রাস্তায় বিশেষ বাহিনী নিয়ে টহল দেবেন পুলিশকর্তারাও। প্রত্যেকটি বুথে থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। পাঁচ থেকে আটটি বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে একটি করে সেক্টর মোবাইল। তিন থেকে চারটি সেক্টর মোবাইল নিয়ে থাকছে একটি করে কুইক রেসপন্স টিম বা কিউআরটি। এরকম ১৮৫টি কিউআরটি থাকছে শহরে। প্রত্যেকটি থানায় থাকছে তিনটি করে আরটি মোবাইল। কলকাতায় মোট ২৪০টি আরটি মোবাইল থাকছে। প্রত্যেকটি থানায় থাকছে একটি করে হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড বা এইচআরএফএস। ৭২টি নাইট পেট্রোল ভেহিক্যালসের মধ্যে ভাঙড় এলাকায় থাকছে নটি করে। কলকাতার বাকি সাতটি ডিভিশনে সাতটি করে। ভোটের আগে কলকাতায় রয়েছে ৪৫টি নাকা। নজরদারির জন্য প্রত্যেকটি থানা এলাকায় তিনটি করে এফএসটি ও এসএসটি থাকছে। ভোটের পর ১৪টি স্ট্রং রুমে পৌঁছে যাবে ইভিএম। স্ট্রং রুমের নিরাপত্তায় থাকছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা। স্ট্রং রুমের দায়িত্বে থাকছে এক প্ল্যাটুন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তার বাইরেই থাকছে এক সেক্টর করে সশস্ত্র বাহিনী। গণনাকেন্দ্রের বাইরেও পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের নিরাপত্তা থাকছে বলে জানিয়েছে লালবাজার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.