অর্ণব আইচ: মুম্বইয়ের বান্দ্রায় হিরের বাজারের ভিতর ঝকঝকে এক অফিস। একেবারে ভিতরে ছোট চেম্বারে গদি আঁটা চেয়ার। গোয়েন্দাদের তীক্ষ্ণ নজর গিয়ে পড়েছিল সেই চেম্বারের একটি ছোট সিন্দুকে। সেখানেই কি লুকিয়ে চেতলায় হিরে রহস্যের চাবিকাঠি?
মুম্বইয়ের কোটিপতি ব্যবসায়ী কলকাতা পুলিশের ভয়ে গাড়ি ছেড়ে যাতায়াত করতে শুরু করেছিলেন লোকাল ট্রেনে। কিন্তু তাতেও তাঁর শেষরক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের ফেলুদা-ব্যোমকেশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন মুম্বইয়ের হিরে ব্যবসায়ী ভরত শাহ। ভরতের অফিসের সিন্দুক থেকে ৫০ লক্ষ টাকার হিরে উদ্ধার করল দক্ষিণ কলকাতার চেতলা থানার আধিকারিক সন্দীপ পালের টিম। এদিকে, মঙ্গলবার ভোররাতে চুরি যাওয়া গয়নার সন্ধানে মেটিয়াবুরুজে হানা দেয় ওই পুলিশ টিম। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে সন্তোষ কর্মকার নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকার চোরাই সোনার গয়না।
চেতলা এলাকার রাজা সন্তোষ রায় রোডের একটি অভিজাত বহুতল আবাসনে ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাট থেকে কোটি টাকার উপর সোনা ও হিরের গয়না চুরি যায়। পুলিশ তদন্ত শুরু করে জানতে পারে যে, ওই বাড়ির প্রায় জনা দশেক পরিচারক, পরিচারিকা, রাঁধুনি, গাড়িচালকের অন্তত চারজনই আলাদা আলাদাভাবে বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে থাকে। আর বাড়ির শিশুটিকে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘ন্যানি’র হাত পড়েছিল লকারের ভিতরের রত্নভাণ্ডারে। পুলিশের দাবি, ঝুমা দাস নামে ওই মহিলা রীতিমতো ছক কষে দফায়-দফায় লকার থেকে গয়না চুরি করে টিফিনবক্সে ভরে পাচার করে। সন্দেহ এড়াতে একই রকম দেখতে নকল গয়না তৈরি করিয়ে রেখে দেয় লকারে। কিন্তু শেষপর্যন্ত চেতলা থানার টিম তদন্ত করে গত বছরের শেষে ‘ন্যানি’ ঝুমা দাস-সহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীও।
বেশ কিছু সোনা ও হিরে উদ্ধার করা হলেও ৫০ লক্ষ টাকা দামের অতি মূল্যবান হিরেটির সন্ধান পাচ্ছিলেন না পুলিশ আধিকারিকরা। এর মধ্যেই ধৃতদের জেরা করে দেবরাজ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেরার মুখে সে স্বীকার করে যে, পরিচারিকা ঝুমা দাসের সরানো ওই দামি হিরেটি গিয়ে পড়ে তার হাতে। সে ওই হিরেটি নিয়ে সৌজা পৌঁছে যায় মুম্বই। মুম্বইয়ের ইস্ট বান্দ্রার ‘বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্স’-এ রয়েছে হিরের বাজারও। সেখানেই গিয়ে দেবরাজ হিরে ব্যবসায়ী ভরত শাহকে ২২ লক্ষ টাকায় ৫০ লক্ষ টাকার হিরে বিক্রি করে। সে নগদ টাকা নিয়ে চলে আসে কলকাতায়। পুলিশ হিরের সন্ধানে মুম্বইয়ে ভরত শাহর অফিসে তাকে না পেয়ে হানা দেয় ‘সুখসাগরে’ তাঁর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। কিন্তু ফ্ল্যাটেও তিনি নেই। আবার বাড়ির গ্যারেজে রাখা তাঁর দামি গাড়ি। পুলিশ আধিকারিকরা জানতে পারেন যে, তিনি গাড়িতে নয়, বাড়ির কাছে মেরিন লাইনস স্টেশন থেকে বান্দ্রা স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াত করছেন ট্রেনে। তার পর স্টেশন থেকে হেঁটে ঢুকছেন অফিসে। পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর পিছু নিয়ে পৌঁছে যায় ভরতের অফিসে। তাঁর সিন্দুক খুলতেই বেরিয়ে পড়ে ভেলভেটের কাপড়ে জড়ানো ৫০ লাখ টাকার হিরে। ভরতকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওই হীরে সে কাকে, কত টাকায় বিক্রির ছক কষেছিল, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.