ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: লকডাউন আর কোয়ারেন্টাইনের বাজারে শতাধিক পাখিদেরও ঠাঁই হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। জানবাজার এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া শতাধিক পাখি আপাতত হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। তারা কেমন আছে জবাব মিলবে কুড়ি দিন পর। তারপরেই তারা ছাড়া পাবে কোয়ারেন্টাইনে।
নিউমার্কেট থানার ৬ নম্বর মট লেন। এলাকাটা জানবাজার লাগোয়া। এই এলাকা দিয়ে যাতায়াতের সময় চিড়িয়াঘরের পাখিদের রকমারি বুলি শুনতে পান পথচারীরা। ১৯৫৭ সালে তৈরি হয় মট লেনে তিওয়ারিদের বাড়ি। সেই বাড়ির পাশেই স্থানীয় কাউন্সিলর তৈরি করেন চিড়িয়াঘর। তবে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে অনাহারে পরে রয়েছে চিড়িয়াঘরের ককটেল, লাভ বার্ড, বদ্রী, জাভা মিলিয়ে শতাধিক পাখি। তাদের মধ্যে একটা জোড়ার আবার ডিম ফুটে সদ্য বাচ্চা হয়েছে। যে ছেলেটি এগুলোর দেখভাল করত লকডাউন ঘোষণার পর থেকে সেও গৃহবন্দি। ফলে প্রায় অনাহারেই দিন কাটছিল পাখিগুলোর। গত ২৬ মার্চ বাজার পরিস্থিতি ঘুরে দেখতে গিয়ে যাদের উপর নজর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বলেন,”এভাবে থাকলে ওরা তো মারা যাবে। পুরসভা ও পুলিশের পদস্থ আধিকারিকদের নির্দেশ দেন অবিলম্বে এদের বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হোক। জায়গা করে দেওয়া হোক আলিপুর চিড়িয়াখানায়।” তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে দ্রুত পদক্ষেপে পাখিগুলিকে আলিপুর চিড়িয়াখানা বা বনদপ্তরের হাতে না তুলে দিয়ে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। পাখিদের আবার কীসের কোয়ারেন্টাইন? এই প্রশ্ন করতেন চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন,”উদ্ধার হওয়া পশুপাখিদের এভাবে কোয়ারান্টাইন করেই রাখতে হয়। এখন যা পরিস্থিতি তাতে এটা অদ্ভুত শোনালেও এটাই বাস্তব। পশুপাখি উদ্ধার করে আনলে আলাদা রাখতে হয়। কারণ, বাইরে থেকে এলে তারা নানারকম রোগ শরীরে বয়ে নিয়ে আসতে পারে। তাই বাকি পশুপাখিদের স্বাস্থ্যর কথা ভেবে তাদের আলাদা রাখা হয়।” সামন্তবাবু মনে করিয়ে দিলেন,”কোয়ারান্টাইন বিষয়টা আসলে মানুষ বাস্তব জীবনে প্রথমবার দেখল।”
ওয়াটগঞ্জ থানার অন্তর্গত আলিপুর চিড়িয়াখানা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরই লালবাজার থেকে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ আধিকারিকরা খবর পেয়ে খাঁচা, জাল নিয়ে হাজির হন। নিউমার্কেট থানার ওসি, অ্যাডিশনাল ওসি—সহ অন্য অধিকারীরাও ততক্ষণে পৌঁছে যান ঘটনাস্থলে। তারাই পাখিগুলিকে খাঁচা থেকে উদ্ধার করে আলিপুর চিড়িয়াখানার হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে খাঁচার মধ্যে হাঁড়িতে থাকা পাখির বাচ্চাগুলিকে বাঁচানো যায়নি। আপাতত উদ্ধার করা পাখিগুলোকেই সুস্থ রাখার চেষ্টা চলছে চিড়িয়াখানার উল্টোদিকের হাসপাতালে। ২০ দিন পর সম্পূর্ণ সুস্থ প্রমাণ হলে চিড়িয়াখানার মূল খাঁচায় তাদের পাঠানো হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.