অর্ণব আইচ: মেয়েটিকে স্কুলে যেতে বলত না তার মা। বরং জোর করে অচেনা পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাত। তাতে কিশোরী মেয়েটি যা রোজগার করত, তা যেত মায়ের হাতে। মেয়েকে রক্ষার বদলে তাকে যৌন ব্যবসায় নামিয়েছিল মা। ফেসবুকে বডি ম্যাসাজের নামে মধুচক্রের ফাঁদ পেতেছিল ওই মহিলা৷ সোশ্যাল মিডিয়াতেই যোগাযোগ করত ক্লায়েন্টদের সঙ্গে। একপরই ১৫ কি বড়জোর ১৬ বছরের দুই কিশোরীর ছবি ভেসে উঠত স্ক্রিনে। মেসেঞ্জারেই পাঠানো হত তাদের ফোন নম্বর আর ঠিকানা। সেইমতো কসবার বাড়িটিতে আনাগোনা চলত খদ্দেরদের। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দক্ষিণ কলকাতার কসবার রাজডাঙায় এলাকা থেকে দুই মহিলা, মূলচক্রী এক ব্যক্তি ও এক ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ৷ উদ্ধার করা হয় নাবালিকা দুই কিশোরীকে। কসবায় ধৃত ওই মহিলাদের জেরা করে তিলজলা এলাকা থেকেও মধুচক্রের সঙ্গে যুক্ত অন্য এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করলেন পুলিশ কর্তারা।
[বেআইনি অস্ত্র ও টাকার হদিশ দেবে জনতা, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু লালবাজারের]
এদিকে, বালিগঞ্জের মহারাজা নন্দকুমার রোডে একটি ফ্যামিলি স্পা-এ তল্লাশি চালিয়ে আরও ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দারা। ফ্যামিলি স্পা-এর আড়ালে সেখানেও মধুচক্র চলত বলে অভিযোগ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে সাতজন মহিলা ও ন’জন খদ্দের। পুলিশ জানিয়েছে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় দেওয়ালে পোস্টার লাগিয়েছিল এই চক্র। দুই সুন্দরীর ছবি দিয়ে বডি ম্যাসাজের নাম করে আকর্ষণ করা হত খদ্দেরদের। পোস্টারে দেওয়া থাকত ফোন নম্বর। একই সঙ্গে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বন্ধুত্ব’ করা হত বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে। কেউ আগ্রহ দেখালে তাকে বলা হত মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করতে। সেখানেই বলা হত, সুন্দরী স্কুলের ছাত্রী বডি ম্যাসাজ করবে। বডি ম্যাসাজের দর দেড় থেকে দু’হাজার টাকা। তা ছাড়াও থাকত মধুচক্র তথা যৌন সম্পর্কের হাতছানি। তার দর উঠত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। বডি ম্যাসাজ অথবা মধুচক্রের ফাঁদে পা দিত বিভিন্ন বয়সের পুরুষ। মেসেঞ্জারে কথাবার্তা এগোলে তারা কিশোরীদের ছবি দেখতে চাইত। তাদের কিশোরীদের ছবি পাঠানো হত। কোনও কিশোরীকে পছন্দ হলে দেওয়া হত ফোন নম্বর ও কসবার রাজডাঙার বাড়িটির ঠিকানা। সেইমতো বাড়ির মধ্যেই ঘরের ভিতরে বসত আসর।
[ঘর সামলাতে পারে না, দেশ চালাবে? রাফালে ইস্যুতে কেন্দ্রকে তোপ মমতার]
লালবাজার সূত্রে খবর, গোপনসূত্রে খবর পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটির উপর নজরদারি চালাচ্ছিলেন গোয়েন্দারা৷ মধুচক্রের বিষয়টি নিশ্চিত হলে তল্লাশি চালান হয় কসবার ওই বাড়িতে। গ্রেপ্তার হয় দুই মহিলা-সহ মোট চারজন। উদ্ধার করা দুই নাবালিকাকে হোমে পাঠিয়েছে পুলিশ৷ জানা গিয়েছে, তারা স্কুলের ছাত্রী হলেও প্রত্যেকদিন স্কুলে যেত না। একজনের মা নিজেই এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মেয়েকে স্কুলে পাঠাত না সে। বরং মেয়ের রোজগারের দিকেই ছিল মায়ের নজর। এবং তিলজলা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া অন্য এক মহিলাও নাবালিকাদের এই কারবারে যোগ দিতে বাধ্য করত বলে অভিযোগ। পুরো ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.