ফাইল ছবি
অর্ণব আইচ: যোগব্যায়াম ও হোমিওপ্যাথির সঙ্গে ভিটামিন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে এভাবেই করোনা দস্যু মোকাবিলার পথে হাঁটছে কলকাতা পুলিশ। এই পদ্ধতিতে রোগকে অনেকটা দূরে রাখা যাবে বলে লালবাজারের আধিকারিকদের একাংশ যথেষ্ট আশাবাদী।
করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে দিল্লি পুলিশ ইতিমধ্যেই আয়ুশের উপর নির্ভর করেছে। তাতে ফলও মিলছে বলে দাবি। অন্যদিকে কলকাতা পুলিশের অধিকাংশ অফিসার-কর্মীর ভরসা যোগব্যায়াম ও ভিটামিন সি। অনেকে তার সঙ্গে হোমিওপ্যাথিকেও বর্ম করছেন। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের কয়েকজন কর্মী ও আধিকারিকের শরীরে ধরা পড়েছে করোনা ভাইরাসের জীবাণু। ফলে বেশ কয়েকজনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এই অবস্থায় কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, তাঁদের রাস্তায় নেমেই করোনার সঙ্গে লড়াই করতে হবে। তাই বাড়াতে হবে নিজেদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা।
বিভিন্ন থানার অফিসার ও পুলিশকর্মীদের বিভিন্ন হটস্পট এলাকা ও রেড জোনে গিয়ে টহল দিতে হচ্ছে। খাবার বা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে মানুষের পাশে। গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মীদের বিভিন্ন কাজে রেড জোনে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে গিয়ে কথা বলতে ও ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলে করোনা থাবা বসাতে পারে। এই জন্যই যোগব্যায়ামের ভাবনা। এক আধিকারিক জানান, তাঁর মতো পুলিশের একটি বড় অংশই শরীর ফিট রাখতে প্রাতঃভ্রমণ করেন। অনেকে সকালে জগিং বা খেলাধুলোও করেন। কিন্তু, লকডাউন চালু হওয়ার পর থেকে সকালে বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ। সবার ক্ষেত্রে ছাদে হাঁটাহাঁটি করা সম্ভব নয়। তাই অনেকেই শরীর চাঙ্গা রাখতে শুরু করেছেন যোগব্যায়াম। অনেক পুলিশ আধিকারিক তাঁদের অধস্তন কর্মীদেরও বলছেন রোজ সকালে উঠে যোগব্যায়াম করতে। তাতে শরীর সচল থাকবে।
এপ্রসঙ্গে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, “এই সময় শরীর সুস্থ রাখতে পুলিশকর্মীদের যা যা করার প্রয়োজন, তাই করতে বলা হয়েছে। অনেকে যোগব্যায়াম করেও নিজেদের সুস্থ রাখার চেষ্টা করছেন। এটা ভাল পদক্ষেপ। এছাড়াও প্রত্যেক পুলিশকর্মী যেন ভাল করে খাওয়া-দাওয়া করেন। অবশ্যই মাস্ক পরে ডিউটি করেন। স্যানিটাইজার ও সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখেন।”
গোয়েন্দা দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, যোগব্যায়ামের সঙ্গে তাঁর বিভাগের কয়েকজন পুলিশকর্মী স্কিপিংও করছেন। যেহেতু তাঁদের বহু মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়, তাই শরীরের প্রতিরোধ ও ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তাঁরা সকালে খালি পেটে হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর্সেনিকাম অ্যালবাম খাচ্ছেন। এই বিষয়ে চিকিৎসক ডা. রথীন চক্রবর্তী জানান, তাঁর কাছ থেকে কলকাতা পুলিশের বহু কর্মী ও আধিকারিক আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০ ওষুধ নিয়েছেন। বহু স্বাস্থ্যকর্মীকেও তিনি ওই ওষুধ দিয়েছেন। করোনার প্রতিরোধের জন্য এই ওষুধ অব্যর্থ। তবে প্রয়োজনে আর্সেনিকাম অ্যালবাম ৩০-এর বদলে ২০০-ও প্রয়োগ করা যেতে পারে।
একটি থানার শীর্ষ আধিকারিক জানান, তাঁর সুগার রয়েছে। লকডাউনে এখন হাটাহাঁটির বদলে ঘরে ব্যায়ামই সম্বল। তবে করোনার সঙ্গে যুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রত্যেকদিনই পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি খাচ্ছেন। অন্যদেরও খেতে বলছেন। উত্তর কলকাতার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা বেশি করে প্রোটিন খাচ্ছেন। তিনি সহকর্মী ও অধস্তনদের বলেছেন, মাছ বা মাংসের জন্য বাজারে প্রত্যেকদিন লাইন দিতে হবে, এমন কোনও মানে নেই। তার বদলে যথেষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল, মটর ডাল, সয়াবিন বা ডিম খেলেও হবে। খেতে হবে প্রচুর ফলও। বাড়ির লোকের সুস্থতার ভাবনাও মাথায় আছে। ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পর জামাকাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে তবেই ওঁরা পরিজনের কাছে আসছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.