স্টাফ রিপোর্টার: এবার অঙ্গদানের সঙ্গে জুড়ল ‘গ্রিন করিডর’৷
এই শহর দেখেছে শোভনা সরকারের অঙ্গদানের পরেও তা প্রতিস্থাপিত হতে না পারার যন্ত্রণা৷ সব ঠিক ছিল, শুধু এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অঙ্গ না পৌঁছনোয় ষোলোআনা সাফল্য মেলেনি৷ এবার আর তাই কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি রাজ্য সরকার৷ বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে যখন বসিরহাটের মাত্র আঠারো বছর বয়সি ছাত্র স্বর্ণেন্দু রায়ের অঙ্গ শরীর থেকে আলাদা করে নিচ্ছেন চিকিৎসকরা, তখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ‘গ্রিন করিডর’ তৈরি করে অপেক্ষায় ছিল কলকাতা পুলিশ৷ স্বর্ণেন্দুর অঙ্গে যাতে নতুন জীবন পেতে পারে কেউ তার জন্য বৃহস্পতিবার প্রথমবার ‘গ্রিন করিডর’ তৈরি করল কলকাতা পুলিশ৷ রাত প্রায় পৌনে একটা নাগাদ অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে স্বর্ণেন্দুর একটি কিডনি পাউচে করে নিয়ে গ্রিন করিডর দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স মাত্র ১৩ মিনিটে পৌঁছয় পিজি হাসপাতালে৷ পরে যায় লিভারও৷
গ্রিন করিডর কী?
রাস্তার পরপর সব সিগন্যাল সবুজ করে তৈরি করা হয় গ্রিন করিডর৷ এক্ষেত্রে ই এম বাইপাস থেকে মা ফ্লাইওভার হয়ে পিজির উত্তর গেট পর্যন্ত তৈরি করা হয়েছিল গ্রিন করিডর৷ সামনে-পিছনে পাইলট কার ও প্রতিটি রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট দাঁড় করিয়ে রাস্তা রাখা হয়েছিল যানবাহন মুক্ত৷
অঙ্গদানের প্রক্রিয়া শুরু হয় বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই৷ স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে দ্রুত একের পর এক প্রশাসনিক ছাড়পত্র মেলে৷ সন্ধ্যার পর অ্যাপোলোতে চলে আসেন পিজি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দল৷ স্বর্ণেন্দুর একটি কিডনি অ্যাপোলোতেই প্রতিস্থাপন করা হয় উত্তরপাড়ার বাসিন্দা রুবি সরদারের দেহে৷ দুপুরেই রুবির বাড়িতে ফোন করে তাঁকে হাসপাতালে ডেকে আনা হয়৷ স্বর্ণেন্দুর অন্য একটি কিডনি পিজি হাসপাতালে নিরুফা খাঁর দেহে এবং লিভারটি সংযুক্ত মণ্ডলের দেহে প্রতিস্থাপিত করা হচ্ছে৷ বারাকপুরের একটি চক্ষু হাসপাতালে স্বর্ণেন্দুর চোখ দু’টি দান করা হচ্ছে৷
গত ৩০ অক্টোবর টিউশন সেরে বাড়ি ফেরার পথে পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হয় বসিরহাটের বাসিন্দা স্বর্ণেন্দু৷ বসিরহাট টাউন হাই স্কুলের মেধাবী ওই ছাত্রকে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে৷ দুর্ঘটনার পর থেকেই কোমায় চলে গিয়েছিল সে৷ টানা পাঁচদিন লড়াইয়ের পর বৃহস্পতিবার দুপুরেই ‘ব্রেন ডেথ’ হয় তার৷
স্বর্ণেন্দুর পরিবার আগে থেকেই অঙ্গদানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল৷ এদিন তার বাবা চন্দ্রশেখর রায় বলেন, “ছেলেকে তো ফিরে পাব না৷ কিন্তু আর পাঁচজনের মধ্যে ও যাতে বেঁচে থাকে সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত৷” স্বর্ণেন্দুর একটি কিডনির প্রাপক রুবিদেবীর বোন রুম্পা দত্ত বলেন, “দিদির কিডনি পাওয়ার খবরে প্রাথমিকভাবে আনন্দ হয়েছিল৷ কিন্তু স্বর্ণেন্দুর মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে৷ ওর পরিবারের মনের জোর দেখে আমরা অভিভূত৷” স্বর্ণেন্দুর পরিবারের সঙ্গে প্রশাসনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন অঙ্গপ্রাপকদের পরিজনরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.