স্টাফ রিপোর্টার : দোলে চ্যাম্পিয়ন হল কলকাতা পুলিশ। বৃহস্পতিবার কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হলেই সেখানেই ছুটে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা। ফলে, এদিন কোথাও কোনও বড় ধরনের গোলমাল হয়নি। দোলের দিন দিনভর কলকাতা পুলিশের কর্তারা রাস্তায় থেকে নজরদারি করেন। উপস্থিত ছিলেন খোদ কলকাতা পুলিশের কমিশনার অনুজ শর্মা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলকাতার রাস্তায় নামে প্রায় পাঁচ হাজার পুলিশ। এই বাহিনী মোতায়েন থাকছে শুক্রবারও। রয়েছে ৭১৯টি পুলিশ পিকেট। রয়েছে কুইক রেসপন্স টিম, রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াড, হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডও। বাইকে চেপে শহরের অলি-গলিতে বৃহস্পতিবার দিনভর টহল দিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি রয়েছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী ‘দ্য উইনার্স’। দোল খেলুন, কিন্তু কোনও বেলেল্লাপনা নয়।- এই স্লোগানকে হাতিয়ার করেই কলকাতা পুলিশ-সহ জেলা পুলিশের কর্তারা পথে নেমেছিলেন। যে কোনওরকম গোলমাল ও বেলেল্লাপনা রুখতে এবার টোটো ও অটো করেও কলকাতা ও আশপাশের জেলার শহরগুলির অলিগলিতে নজরদারি চালায় পুলিশ। একইসঙ্গে রং মাখানোর নাম করে শ্লীলতাহানি ও ইভটিজিং রুখতে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টিম বৃহস্পতিবার সারাদিন এলাকায় টহল দেয়।
ছোটখাটো কিছু ঘটনায় রাত পর্যন্ত মদ্যপ অবস্থায় দোল খেলা-সহ নানা ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয় বৃহস্পতিবার। দোলের আগের দিন যে পরিকল্পনা নিয়ে পুলিশ পথে নামে এদিন সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরোপুরি সফল হয় কলকাতা পুলিশ। শুধু কলকাতা নয়, শহরতলি ও জেলাগুলিতেও আইনশৃঙ্খলার উপর নজরদারি চালিয়ে পুরোপুরি সফল হয় পুলিশ। কলকাতা ছাড়াও হাওড়া, বিধাননগর, বারাকপুর ও চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটে উৎসবের ওই দু’টি দিন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পথে নেমেছে পুলিশ। দোল ও হোলিতে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইতিপূর্বে পাড়ায় পাড়ায় লিফলেটও
বিলি করেছে কলকাতা-সহ আশপাশের জেলার পুলিশ।
বহুতলগুলির ছাদ থেকে রং ছোড়ার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। সেই নিষেধাজ্ঞা না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (সদর) জাভেদ শামিম। মিশ্র এলাকাগুলির ওপরও থাকছে পুলিশের বিশেষ নজর। পুলিশের নির্দেশ, যেন মদ্যপ অবস্থায় বাইকে করে কেউ হোলি না খেলে অথবা বেপরোয়া গতিতে বাইক না চালায়। যেন কোনও বাইকে দু’জনের বেশি আরোহী না থাকে। মাথায় হেলমেট না থাকলে সেই বাইক চালক ও আরোহীদের সঙ্গে সঙ্গেই আটক করা হয়েছে। তার জন্য জায়গায় জায়গায় গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকানো হয়েছে। অনেক সময়ই মালবাহী গাড়ি করে হোলি খেলা ও গাড়ি থেকে রং ছোড়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। তা করলেই সেই গাড়ির আরোহীদের বৃহস্পতিবার দিনভর ধরা হয়েছে। গঙ্গার ঘাটের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়াও শহরের প্রতিটি পুকুরের উপরও পুলিশকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। কারণ, রং খেলার পর মদ্যপ হয়ে সাঁতার না জেনে পুকুরে নামলে ঘটতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা । আর কলকাতা পুলিশের তরফে এই ব্যবস্থা জারি থাকছে শুক্রবারও।
[পরিত্যক্ত গোডাউনে মদ্যপের হাতে খুন যুবক, চারু মার্কেটে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত]
এদিকে বৃহস্পতিবারের মতো যাতে শান্তি ও শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে, তার জন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে আজও অর্থাৎ শুক্রবারও। যাতে ছাদ কিংবা ওপর থেকে রং বা রং-ভর্তি বেলুন না ছোড়া হয়, তার জন্য আগে থেকেই বাড়ি বাড়ি লিফলেট বিলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। বিধাননগর ও হাওড়ায় সরু গলির সংখ্যা অনেক বেশি। ওই সমস্ত গলিতে সবচেয়ে বেশি করে রং খেলা হয়। সেই সমস্ত গলিতেও কড়া পুলিশি নজরদারি চলেছে বৃহস্পতিবার সারাদিন। কোনও গোলমাল এড়াতে সকাল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মদের দোকান ও পানশালা। ফলে এদিন বেআইনি মদ, এমনকী, চোলাই কারবারিরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের অন্তত দশটি পয়েন্ট বেছে নেওয়া হয়। গার্ডেনরিচ, পশ্চিম বন্দর, খিদিরপুর, তপসিয়া, পার্ক সার্কাস রেল স্টেশন, বালিগঞ্জ স্টেশন, মানিকতলা, উল্টোডাঙা, টালিগঞ্জ, বড়তলা-সহ শহরের অন্তত দশটি জায়গার উপর বিশেষ নজরদারি চালান গোয়েন্দারা। চোলাই ও জাল মদ রুখতেও দিনভর চলে আবগারি গোয়েন্দা ও পুলিশের নজরদারি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.