ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: কোচবিহার থেকে প্রথমে কলকাতা। এর পর ভোল পালটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ও মথুরাপুরে গা ঢাকা দিয়েছিল ভারতীয় আল কায়েদার শীর্ষ নেতা তথা সারা দেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি’ ইকরামুল হক ওরফে আবু তালহা। কলকাতা পুলিশের তাড়া খেয়ে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়েছিল সে। শেষপর্যন্ত কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের তথ্যের ভিত্তিতেই বাংলাদেশের ঢাকার সুবজবাগের গোপন ডেরা থেকে গ্রেপ্তার হল আবু তালহা।
বাংলাদেশ ও কলকাতা, এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, দিল্লি, অসম, বিহার, ঝাড়খণ্ড সহ বিভিন্ন রাজ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (আকিস)-এর শীর্ষ নেতা তালহা। এই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ‘আমির’-এর পদ দেওয়া হয় তাকে। তারই উদ্যোগেই বিভিন্ন রাজ্যে তৈরি হয়েছিল আল কায়েদার স্লিপার সেল।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহের বাসিন্দা প্রথমে ঢাকায় পড়াশোনার পর ২০১৮ সালে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসে। উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দে পড়াশোনা করতে করতেই ‘আকিস’-এ যোগ দেয় সে। সেখান থেকে পালিয়ে আসে কোচবিহারে। সেখানে নেটওয়ার্ক তৈরির পর আসে কলকাতায়। সেখান থেকে জয়নগর ও মথুরাপুরে নিজের ও স্ত্রী ফারিয়া আফরিন আনিকার জাল আধার কার্ড তৈরি করে ডেরা তৈরি করে। এই রাজ্য ও ভিনরাজ্যে জঙ্গি নিয়োগ শুরু করে। রীতিমতো অনলাইনে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিত সে। আমেরিকায় টুইন টাওয়ার ধ্বংস থেকে শুরু করে বহু ভিডিও দেখাত। গত বছর মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে একাধিক বাংলাদেশি সহ ধৃত আল কায়েদার আট সদস্য ও পরে গুজরাত থেকে ধৃত চারজনকে জেরা করে আবু তালহার নামই উঠে আসে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতার ছক কষে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে দশটি অভিযোগ রয়েছে। আবার বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে ধৃত জঙ্গি খালেদ সইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করেও তার বিষয়ে তথ্য মেলে।
কলকাতা পুলিশের এসটিএফ তার সন্ধানে তল্লাশি চালানো শুরু করতেই কয়েক মাস আগে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে চোরাপথে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় সে। এই ব্যাপারে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-র গোয়েন্দাদের সঙ্গে এসটিএফের গোয়েন্দাদের অনলাইনে বারবার বৈঠক হয়। সূত্র মারফৎ ঢাকার কোথায় সে লুকিয়ে রয়েছে, সেই সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করে এসটিএফ। লালবাজারের গোয়েন্দাদের সূত্রের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার গোপন ডেরায় হানা দেন সিটিটিসি-র গোয়েন্দারা। এসটিএফ জানিয়েছে, জয়নগরের ডেরায় বসেই সে টেলিগ্রাম ও কয়েকটি অ্যাপের মাধ্যমে আবু তালহা আল কায়েদার একাধিক নেতা, আকিস নেতা ওয়াসিম ওমর, বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নেতা মওলানা ওসমান গনি ও শাইখ তামিম আল আদনানির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখত। আল কায়েদার এই রাজ্য ও অন্য রাজ্যের স্লিপার সেলের সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.