প্রতীকী ছবি
অর্ণব আইচ: ঘরে গা ঢাকা দিয়েছে জঙ্গিরা। অন্ধকারে দেওয়াল ঘেঁষে তারা গন্ধ শুঁকে পৌঁছবে সেই ঘরে। তাদের সারা শরীর ঢাকা বুলেট প্রুফ জ্যাকেটে। মাথায় বসানো নাইট ভিশন ক্যামেরা। কানে ছোট্ট মাইক্রোফোন। অন্ধকার হোক, বা আলো। চারপাশের ছবি উঠতে শুরু করবে ক্যামেরায়। সেই ছবি সরাসরি পৌঁছবে হ্যান্ডলারের মনিটরে। তা দেখে হ্যান্ডলার ও পুলিশকর্তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, তারা কতটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অথবা তারা আক্রান্ত হতে পারে কি না। তাদের কানের কাছে থাকা মাইক্রোফোনে এসে পৌঁছবে নির্দেশ। সেই অনুযায়ী তারা নিঃশব্দে দেওয়ালের সঙ্গে প্রায় মিশে হেঁটে ফিরে যেতে পারে হ্যান্ডলারের কাছে। আবার নির্দেশ পেলে ঝাঁপিয়ে টুঁটি কামড়েও ধরতে পারে জঙ্গির।
এবার জঙ্গি দমনকারী সারমেয় বাহিনী তৈরি করছে কলকাতা পুলিশ। আর তাদের বাসস্থান হচ্ছে নবান্নের খুব কাছেই কাজিপাড়া ফ্লাইওভারের নিচে। লালবাজার জানিয়েছে, নাশকতা রুখতে সারাক্ষণ তৈরি থাকে কলকাতা পুলিশের সারমেয় বাহিনী। কোথাও ভিআইপি বা ভিআইপিরা গেলে তার আগে বম্ব স্কোয়াডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জায়গাটি পরীক্ষা করে পুলিশ কুকুর। বিস্ফোরকের সঙ্গে সঙ্গে খুনি বা মাদক ধরতেও পুলিশের সারমেয়রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে থেকেই ডগ স্কোয়াডের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের জন্য পরিকল্পনা করেন লালবাজারের পুলিশকর্তারা। তখনই নবান্নের নিরাপত্তা বাড়াতে নবান্নের কাছেই ডগ স্কোয়াড সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো কাজিপাড়া ফ্লাইওভারের নিচে একটি জায়গায় তৈরি হয়েছে ডগ স্কোয়াডের সদস্যদের জন্য ‘কেনেল’।
এখানে নতুন ৩৫টি কুকুর রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশের এক কর্তা জানান, মার্চের মধ্যে কেনেল বা কুকুরদের বাসস্থান তৈরির কাজ শেষ হতে পারে। এর পর পুলিশ কুকুর কেনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। আপাতত ৩০টি নতুন শাবক কেনা হতে পারে। সেগুলোর মধ্যে একটি বড় অংশকেই জঙ্গি দমনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে লাদেনের সন্ধান পাওয়া বেলজিয়ান মালিনোয়া বা ম্যালিনোয়িস কেনার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। কারণ, পুলিশের মতে, ভারী বুলেট জ্যাকেট পরে নিঃশব্দে হেঁটে গিয়ে প্রয়োজনমতো শত্রু বা জঙ্গি গুলি চালানোর আগেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে অকেজো করে দেওয়ার মতো কাজের জন্য এই বেলজিয়ান শেফার্ড ব্রিডের এই কুকুরের জুড়ি নেই। এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সহজ। তবে ৩০টি কুকুরই বেলজিয়ান ম্যালিনোয়িস না কি অন্য ব্রিডও কেনা হবে, তা নিয়ে ভোটের পর আলোচনা করতে চান পুলিশকর্তারা।
পরবর্তী সময়ে নবান্নের জন্য ছাড়াও রাজ্যের কোথাও জঙ্গি হানা হলে অথবা জঙ্গি ধরার জন্য এই কুকুরগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এখন ইন্দো টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ বাহিনীর শিবিরে কলকাতা পুলিশের শাবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও জঙ্গি দমনের মতো বিশেষ প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বেসরকারি সাহায্যও নেওয়া হতে পারে। নবান্নের কাছে কেনেল তৈরি হলেও প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর সারমেয় বাহিনীকে সাঁতার ও দৌড়াদৌড়ি, শক্ত মাটিতে হাঁটানোর অভ্যাসের জন্য পিটিএসের ডগ স্কোয়াডে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। আবার হাওড়ায় কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতেও এই বিশেষ সারমেয় বাহিনীর জন্য কোনও সুইমিং পুল বা দৌড়ানোর জায়গা তৈরি করা যেতে পারে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.