অর্ণব আইচ: ছেলেকে বলেছিলেন, একটু পরই বাড়ি ফিরবেন। স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, বাড়ি ফিরে মধ্যাহ্নভোজন করবেন। কিন্তু বাড়ি আর ফেরেননি দক্ষিণ কলকাতার চারু মার্কেট থানার পুলিশকর্মী প্রদীপ ভট্টাচার্য। তার আগেই শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বালিগঞ্জ থেকে ঢাকুরিয়ার মধ্যবর্তী জায়গা থেকে উদ্ধার হল ওই কনস্টেবলের রক্তাক্ত দেহ। আর এই মৃত্যু নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে বালিগঞ্জ রেল পুলিশ। একই সঙ্গে কলকাতা পুলিশও খতিয়ে দেখছে এই মৃত্যুর কারণ।
প্রাথমিকভাবে ময়নাতদন্তের পর চিকিৎসকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ট্রেন ধাক্কা দেওয়ার ফলেই মৃত্যু ওই ব্যক্তির। দু’টি পায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছে ট্রেনের চাকা। শিয়ালদহগামী একটি ট্রেনের গার্ড নক ডাউন মেমোও জমা দিয়েছেন। ওই পুলিশকর্মীর পকেট থেকে টালিগঞ্জ থেকে বেলঘরিয়া যাওয়া-আসার টিকিট উদ্ধার হয়েছে। কাকুলিয়া রেল গেটের কাছাকাছি যে জায়গা থেকে পুলিশকর্মীর দেহটি উদ্ধার হয়েছে, সেখানে তাঁর যাওয়ার কথাই নয়। তিনি কী কারণে রেল লাইনের পাশে ওই নির্জন জায়গায় গিয়েছিলেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। রেল লাইন পার হওয়ার সময় তাঁকে ট্রেন ধাক্কা দেয়, সেই সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। তাঁকে কি কোনও অপরাধী সংক্রান্ত খবর দেওয়ার নাম করে কেউ সেখানে ডেকে নিয়ে এসেছিল, সেই প্রশ্নও উঠে এসেছে।
তবে প্রাথমিকভাবে সহকর্মীরা জানতে পেরেছেন যে, তিনি নিজেই তাঁর পাঁচ বোনের বিয়ে দিয়েছেন। তার উপর মাথার উপর দু’টি ঋণ ছিল। দুই ছেলের পড়াশোনার খরচও ছিল। আর্থিক অনটনে ভুগছিলেন তিনি। তার উপর কাজের চাপে এক মাসের উপর বাড়ি যাননি। থাকতেন চারু মার্কেট থানার বারাকে। কাজের চাপ থেকে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ও সেই কারণেই তিনি আত্মঘাতী হন কি না, পুলিশ তা-ও খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরেই চারু মার্কেট থানার কনস্টেবলের পদে ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। গত ৩০ জুন সকালে থানার এক আধিকারিককে বাড়িতে যাওয়ার কথা জানান। দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ ছেলে ও স্ত্রীকে ফোন করে জানান, ট্রেনে করে দুপুরের মধে্যই বাড়ি ফিরে খাবেন। দুপুর ২টো ৭ মিনিটে এক সহকর্মী তথা চারু মার্কেট থানার এক কনস্টেবল প্রদীপকে ফোন করে জানান, তিনি নতুন বৈদ্যুতিন কার্ড নিতে যাবেন কি না। সেদিন যেতে পারছেন না বলে প্রদীপ জানিয়ে দেন। বিকেলেও বাড়ি না ফেরায় স্ত্রী তাঁকে ফোন করতে থাকেন। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তাঁর এক ভগ্নিপতিকে ফোন করে বালিগঞ্জ জিআরপি ডেকে পাঠায়। স্ত্রী গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন। পুলিশের সন্দেহ, তিনি টালিগঞ্জ থেকে বজবজ লোকালে উঠে হয় লেক গার্ডেন্স, অথবা বালিগঞ্জ স্টেশনে নেমে ওই ঘটনাস্থলের দিকে হাঁটছিলেন। তখনই ঘটনাটি ঘটে। কেন তিনি বাড়ি যাওয়ার বদলে ওদিকে যান, তা নিয়ে এখনও রহস্য রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.