প্রতীকী ছবি
অর্ণব আইচ: শেয়ার ব্যবসার নামে সাইবার অপরাধ। প্রায় ৬৪ লক্ষ টাকার সাইবার প্রতারণার অভিযোগে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিল তন্ময় পাল নামে এক যুবক। কিন্তু কেন্দ্রীয় পোর্টাল ঘাঁটতেই লালবাজারের গোয়েন্দাদের চক্ষু চড়কগাছ। সারা দেশ থেকে অন্তত ৩০০ জনের কাছ থেকে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই যুবক। বারাসতের বাড়িতে বসেই এই বিপুল টাকার প্রতারণার কারবার খুলে বসেছিল সে। কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার আধিকারিকরা তাকে গ্রেপ্তার করার পর এই বিপুল টাকা কীভাবে সরিয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন। এই ব্যাপারে দেশের আরও কয়েকটি শহর ও রাজ্যের পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা আধিকারিকদের। তন্ময় পাল নামে ওই অভিযুক্তকে জেরা করতে পারে ভিনরাজ্যের পুলিশও।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশের এই ৬৫ কোটি টাকার রহস্যভেদ করার পিছনে রয়েছে সারা দেশজুড়ে কাজ করা জেসিসিটি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা জেএমাইএস পোর্টাল। এই পোর্টালের ব্যবহারকারী হতে পারেন দেশের প্রত্যেকটি শহর ও রাজ্যের পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। সাধারণত কোনও সাইবার অপরাধী পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি সে ব্যবহার করেছে অথবা যে অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে বিপুল টাকা সরানো হয়েছে, সেগুলির উপর নজর রাখা হয়। জেএমআইএস পোর্টালে অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সার্চ করলেই সারা দেশের কোন ব্যক্তির কাছ থেকে কবে, কত টাকা এসে অ্যাকাউন্টগুলিতে জমা হয়েছে, তা জনতে পারে পুলিশ।
এই পদ্ধতিতে বারাসত থেকে তন্ময় পাল ধরা পড়ার পর লালবাজারের সাইবার থানার আধিকারিকরা ওই পোর্টালে সার্চ করেন। তাতেই হয় রহস্যভেদ ও কলকাতা পুলিশের সামনে আসে বিস্ফোরক তথ্য। গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে কোটি কোটি টাকা রোজগারের টোপ দিয়ে তন্ময় সারা দেশের অন্তত তিনশো ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলেছে। একেকজনের কাছ থেকে গড়ে কুড়ি লাখ টাকা হাতিয়েছে সে। দিল্লি, মুম্বই, পাটনা, বেঙ্গালুরু থেকে শুরু করে বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাদের তার ফাঁদে পা দিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে অনেককে সেই গ্রুপে তারা যোগ করত। শেয়ারের ব্যবসার নামে তাঁদের লগ্নি করতে বলা হত। নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে সেবি, ইউএস সিকিউরিটি, এক্সচেঞ্জ কমিশনের ভুয়ো লোগো ব্যবহার করত সে।
প্রথমদিকে তাঁদের অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা ফেরত দিত। লোভে পড়ে তাঁরা আরও টাকা লগ্নি করলেই বন্ধ করে দেওয়া হত গ্রুপ। এভাবে কলকাতারই এক বাসিন্দার ৬৩ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৪৬ টাকা হাতিয়ে নেয় তন্ময় পাল। অভিযোগকারী কলকাতা পুলিশের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অ্যাকাউন্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সূত্র ধরে বারাসত থেকে তন্ময়কে গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.