অর্ণব আইচ: একশো টাকার জাল নোটে ছেয়ে গিয়েছে কলকাতা। শুল্ক দপ্তরের কাছ থেকে পাওয়া এই রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত নেমে পূর্ব কলকাতা থেকে উদ্ধার হল প্রচুর একশো টাকার জাল নোট। সেই সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে কলকাতা থেকে বড় জাল নোট চক্রের হদিশ পেল বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ ও কলকাতা (Kolkata) পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)। নেহাৎই ঘরোয়াভাবে এই জাল নোট তৈরি হলেও যে কাগজ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আসল নোটেরই কাগজ। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই নোটের কাগজ জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব। সেই ক্ষেত্রে এই চক্রের পিছনে পাক গোয়েন্দা সংস্থা ISI-এর হাত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। এই ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ সামির খান, মহম্মদ তাইজান আহমেদ ও মাজিদ হুসেন নামে তিনজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কিছুদিন আগে শুল্ক দপ্তরের কাছ থেকে বেনিয়াপুকুর থানার আধিকারিকরা খবর পান যে, পূর্ব কলকাতার বেনিয়াপুকুর, তপসিয়া, তিলজলা, কড়েয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গিয়েছে ১০০ টাকার জাল নোট। এরকম কিছু নোটের নমুনাও পুলিশের কাছে আসে। গোপন সূত্র খবর পেয়ে বেনিয়াপুকুরের একটি গোপন ডেরায় পুলিশ তল্লাশি চালায়। সামির খান নামে একজনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মোট ৪৩৬টি জাল ১০০ টাকার নোট ধরা পড়ে। সামিরকে জেরা করে তপসিয়া অঞ্চলের একটি বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। গ্রেপ্তার করা হয় মহম্মদ তাইজান আহমেদকে। তার বাড়ি থেকে কম্পিউটার, আধুনিক স্ক্যানার ও উন্নতমানের প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়। তার কম্পিউটার খুলে পুলিশ জানতে পারে যে, নতুন ১০০ টাকার নোট স্ক্যান করে, কাগজের দু’পাশে তার প্রিন্ট আউট বের করা হয়েছে। এ ফোর সাইজের সেই কাগজ কেটে তৈরি করা হচ্ছে জাল নোট। সেই জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করছে এই জাল নোট পাচার চক্র।
এরপর তদন্ত শুরু করার পর মাথায় হাত পুলিশ আধিকারিকদের। সাধারণভাবে টাকা তৈরির কাগজ বিদেশ থেকে আসে। সেই কাগজ একমাত্র জোগাড় করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ছাড়াও পাকিস্তান সরকারও একই জায়গা থেকে টাকা ছাপানোর জন্য কাগজ সংগ্রহ করে। ফলে একমাত্র পাক গুপ্তচর সংস্থা ISI-এর মদতে এই জাল নোটের কাগজ ওই চক্রের হাতে এসেছে, এমন সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। শিয়ালদহ আদালতে ওই দুই অভিযুক্তকে তোলার পর তাদের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
পরবর্তীতে শিয়ালদহ আদালতে আবেদন জানিয়ে বেনিয়াপুকুর থানা থেকে নিজেদের হেফাজতে দুই অভিযুক্তকে নেন লালবাজারের এসটিএফের গোয়েন্দারা। কীভাবে এই জাল নোটের কাগজ চক্রের হাতে আসছে ও কীভাবে তা ছড়ানো হচ্ছে, সেই তদন্ত শুরু করেন গোয়েন্দারা। দুই ধৃতকে জেরা করে গভীর রাতে তপসিয়া রোডে হানা দিয়ে রিপন স্ট্রিটের বাসিন্দা এই চক্রের আরও এক চাঁই মাজিদ হুসেন ওরফে ইমরান ওরফে রাজাকে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। তার কাছ থেকে দু’টি পাঁচশো টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়। বুধবার তিনজনকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাদের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এই চক্রটি একই পদ্ধতিতে পাঁচশো টাকার নোটও জাল করত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.