নিরুফা খাতুন: অপরূপ সুন্দরী। বয়স খুব বেশি নয়। স্ট্রেটনিং করা চুল। পরনে জিনস, টপ। হাতে দামি ফোন। গড়গড় করে ইংরেজিতে কথা বলছেন। এহেন মহিলা কি না পকেটমার! হতবাক পুলিশের গোয়েন্দারাও। ছত্তিশগড়ের ‘গুলাব গ্যাং’ শহরে ঘুরছে। সুযোগ বুঝে ব্যাগ কেটে তুলে নিচ্ছে টাকা, মোবাইল ফোন। বছরের প্রথম দিন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ধরা পড়ল ছ’জন মহিলা কেপমার। আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে কেপমারি করে ফেরার সময় শেক্সপিয়র সরণিতে মূল পান্ডা-সহ গ্রেফতার ছত্তিশগড়ের গুলাব গ্যাং। এই গ্যাংয়ের আরও অনেক সদস্য এভাবে শহরে বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে কেপমারি করছে। তাঁদের সন্ধানে শহরে দ্রষ্টব্য স্থানগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা।
শীতের মরশুমে শহরে দ্রষ্টব্য স্থানগুলিতে ভিড় থাকে। এই সময় কেপমারির অভিযোগ বেশি শোনা যায়। নতুন বছরে সকাল থেকে শহরে ভিড় জমাতে শুরু করেন লোকজন। বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ আসেন। বাইরে থেকে আসা লোকজনের উপর নজর থাকে গোয়েন্দা টিমের। শেক্সপিয়র সরণিতে এদিন নজরদারি চালাচ্ছিল গোয়েন্দা বিভাগের টিম। দুপুরের দিকে একদল মহিলাকে হেঁটে যেতে দেখে সন্দেহ হয়। তঁাদের তল্লাশি করতে ব্যাগ থেকে একাধিক মানিব্যাগ ও মোাবাইল উদ্ধার হয়। এত ফোন, টাকার ব্যাগ কোথা থেকে এসেছে, জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশের কাছে কেপমারির কথা স্বীকার করে নেন মহিলারা। পুলিশ সূত্রে খবর, ছ’জন মহিলা ছিল। প্রত্য়েকে অল্প বয়সি এবং স্মার্ট। শেক্সপিয়র সরণি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। প্রথমে সন্দেহ হয়নি। তারপর তল্লাশি করতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে যান গোয়েন্দারাই। ছত্তিশগড়ের এই স্মার্ট মহিলারা আদতে কেমপারি করতে শহরে এসেছে। তারা এদিন আলিপুর চিড়িয়াখানায় আসা দর্শকদের ব্যাগ থেকে ফোন, মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে এসেছিল। এদের মূল পান্ডা মন্দা পুরওয়ার। মূল পান্ডা-সহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্যাংয়ের বাকি সদস্যদের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ।
আলিপুর চিড়িয়াখানায় কেপমারির ঘটনা নতুন নয়। শীতের মরশুমে চিড়িয়াখানায় ভিড় সবচেয়ে বেশি। সিসিটিভি লাগানোর পর কেপমারদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমেছিল। তবে লকডাউনের পর থেকে কেপমারি বেড়ে গিয়েছে। গত বছরও শীতের মরশুমে চিড়িয়াখানায় কেপমারির একাধিক অভিযোগ এসেছিল। যাতে সন্দেহ করতে না পারে, সেজন্য সঙ্গে বাচ্চা নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঢুকছেন মহিলা কেপমাররা। এখন এই মহিলা কেপমাররা কার্যত ঘুম কেড়ে নিয়েছে চিড়িয়াখান কর্তৃপক্ষের। আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তাদের কথায়, আগে পকেটমারদের দেখলে বোঝা যেত। গত বছর থেকে কেপমার গ্যাং মহিলাদের ব্যবহার করছে। গত দু’দিনে চিড়িয়াখানা থেকে একাধিক মহিলা কেপমারকে আটক করা হয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, বাইরের একটা বড় গ্যাং এসেছে। মূলত মহিলা কেপমারি গ্যাং। এরা উৎসবের মরশুমকে টার্গেট করে থাকে। এই কেপমারের দল একসঙ্গে চিড়িয়াখানায় ঢুকছে না। সব খাঁচার সামনেও তারা ভিড় জমাচ্ছে না। যেসব খঁাচায় দর্শকদের ভিড় বেশি হয় সেগুলিকে নিশানা করেছে। ভিড়ের মধ্যে সহজে হাত সাফাই করে ফেলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.