কৃষ্ণকুমার দাস: মাঝেরহাট ব্রিজে ভয়ানক বিপর্যয়ের জেরে অন্তত দু’বছরের জন্য মহানগরীর দক্ষিণ-পশ্চিমে তারাতলা কেন্দ্রিক নতুন ট্রাফিক রুট চালু করছে কলকাতা পুলিশ। প্রতিদিনই এই মাঝেরহাট ব্রিজ দিয়ে ডায়মন্ডহারবার রোড ধরে বেহালা-ঠাকুরপুকুরের পাশাপাশি বজবজ, মহেশতলা, সাতগাছিয়া, বিষ্ণুপুর, ফলতা, কাকদ্বীপ, সাগর-বকখালি যাতায়াত করেন লক্ষ লক্ষ যাত্রী। কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন সেই রুট থমকে যাওয়ায় এবার অপেক্ষাকৃত সরু রাস্তায় বিকল্প সরণী দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মহানগর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বৃহদংশে যাতায়াত শুরু হয়েছে।
বস্তুত এই কারণেই ব্রিজ ভাঙার ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই সম্ভাব্য যানজট নিরসনে নয়া ট্রাফিক রুট নিয়ে পুলিশ ও পুরকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বৈঠকে ছিলেন কলকাতার পুর কমিশনার রাজীব কুমার ছাড়াও ডিসি সাউথ মীরাজ খালিদ, ডিসি (দক্ষিণ-পশ্চিম) নিরঞ্জন বিশ্বাস, ডিসি (বন্দর) ওয়াকার রাজা ছাড়াও জয়েন্ট সিপি ট্রাফিক রীতেশ জৈন। ডেকে পাঠানো হয় দক্ষিণ-পশ্চিম কলকাতার নানা ট্রাফিক গার্ডের ওসিকে। লালবাজার সূত্রে খবর, চেতলা, নিউ আলিপুর, আলিপুর, টালিগঞ্জ, বেহালা ও তারাতলা এলাকায় অন্যদিনের তুলনায় আজ থেকে প্রায় দ্বিগুণ ট্রাফিক-ফোর্স নামানো হচ্ছে। রাস্তায় থাকবেন এলাকার সংশ্লিষ্ট থানাগুলির পুলিশের অফিসাররাও।
যে পথে যানচলাচল
৬৪ বছর আগে তৈরি মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে নাকি সংস্কার করে চালু করা হবে তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তবে কমপক্ষে দু’বছর ওই এলাকা দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বভাবত এই সময়টা বিকল্প পথে গাড়ি চলাচল করবে। পুরমন্ত্রী জানান,‘‘দুর্গাপুর ব্রিজ, চেতলা ব্রিজ ও টালিগঞ্জ ফাঁড়ির লাগোয়া টালিনালার উপরের ব্রিজ ধরে নিউ আলিপুর ও মহাবীরতলা দিয়ে যাতায়াত করবে। মূলত বজবজ, বেহালা, মহেশতলার জন্য এই রুটের ভাবনা হয়েছে। তারাতলা ও চণ্ডীতলা দিয়েও বেহালা-ঠাকুরপুকুর যাওয়ার জন্য গাড়ি চলাচলের প্রস্তাব হয়েছে। টালিগঞ্জ-করুণাময়ী, হরিদেবপুর দিয়ে জেমস লঙ সরণী হয়ে আমতলা ও ডায়মন্ডহারবার-সাগর যাওয়ার বিষয়টি দেখা হয়েছে।’’ তবে পুরোটাই ট্রাফিক ও পুলিশকর্তারা বিভিন্ন রুটের ভারী ও হাল্কা গাড়ির সংখ্যা বিচার করে প্রয়োজনে ওয়ান-ওয়ে ও টু-ওয়ে করার সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও পুরমন্ত্রী জানান।
বুধবার সকাল থেকেই নিউ আলিপুর, আলিপুর, চেতলা, মহাবীরতলা, করুণাময়ী, হরিদেবপুর ও জেমস লঙ সরণি এলাকায় যানজট তৈরির সম্ভবনা প্রবল। বজবজ-মহেশতলা রুটের হাজার হাজার লরি এবার ঘন ও অভিজাত জনবসতির চেতলা-নিউ আলিপুর-টালিগঞ্জ দিয়ে যাতায়াত করায় যে যানজট হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। উদ্বেগ ছড়িয়েছে সংলগ্ন এলাকার নামী স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবকমহলেও। তবে অপেক্ষাকৃত সরু পথে বিকল্প রুটেও অনেকগুলি পুরনো ছোট ব্রিজ রয়েছে, সেখান দিয়ে ভারী লরি যাতায়াত করলে ফের কোনও দুর্ঘটনা ঘটবে না তো? চিন্তা শুরু হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ মহলেও।
উদ্ধারকার্য তদারকি করার পাশাপাশি যে সমস্ত রুটে এবার বাড়তি গাড়ির চাপ পড়বে সেই রাস্তাগুলি যুদ্ধকালীন তৎরপরতায় মেরামত করার নির্দেশ দেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। রাতেই সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলির বিভিন্ন অংশে ছোটখাটো গর্ত বন্ধ ও পিচ-ঢালাইয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে পুরসভা। তবে দুর্গাপুর ব্রিজ দিয়ে ঘুরপথে গাড়িগুলি যাওয়ায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই যানজট তৈরি হয়েছিল হাজরা, কালীঘাট, রাসবিহারী, টালিগঞ্জ ফাঁড়ির পাশাপাশি হরিদেবপুর এবং জেমস লঙ সরণিতেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.