প্রতীকী ছবি।
অর্ণব আইচ: বাড়ি ভেঙে গেলেও আমি একা বের হব না। যতক্ষণ না আমার ১৪টা কুকুরকে বের করা হচ্ছে, ততক্ষণ আমাকেও কেউ বের করতে পারবে না। মধ্য কলকাতার পুরনো বাড়ির সিঁড়ি ভেঙে নেমেছে ধস। এই অবস্থায় আটকে থাকা বাড়ির দুই বাসিন্দাকে অক্ষত অবস্থায় বাইরে বের করে আনা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। সেখানে বৃদ্ধের এক গোঁ। আটকে থাকা কুকুরগুলিকেও উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসতে হবে। না হলে তিনিও বের হবেন না। শেষ পর্যন্ত জিৎ হল তাঁরই। দমকল ও পুলিশ একে একে ১৪টি কুকুরকে উদ্ধার করে নিয়ে এল বাইরে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনাটি ঘটেছে মধ্য কলকাতার জোড়াসাঁকো থানা এলাকার মহাত্মা গান্ধী রোডে। বৃদ্ধের কুকুর প্রেম দেখে অভিভূত দমকল ও পুলিশ অফিসাররাও।
পুলিশ জানিয়েছে, পুরনো ওই বাড়িটির দোতালায় থাকেন জয়িতা মিত্র ও তাঁর পরিজন সন্তোষ কর্মকার। আর থাকে ১৪টি বিভিন্ন বয়সের পোষ্য। দুবেলা নিজের হাতে তাদের খাবার ব্যবস্থা করেন সন্তোষবাবু। কুকুরগুলো সারাক্ষণ তাঁকে ঘিরে থাকে। এদিন বিকেলে হঠাৎ এই পুরনো বাড়িটির সিঁড়ি ভেঙে ধসে পড়ে। প্রচণ্ড শব্দ পেয়ে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। খবর যায় পুলিশ ও দমকলে। দেখা যায়, দোতালার আটকে রয়েছে ওই পরিবার। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। দমকল ও ডিএমজি প্রথমে জয়িতা মিত্রকে উদ্ধার করে নিচে নিয়ে আসে। এবার সন্তোষবাবুকে উদ্ধার করতে যাওয়া মাত্রই তিনি বেঁকে বসেন। বলেন, তাঁর আগে ১৪টি পোষ্যকে উদ্ধার করতে হবে। তার পর তিনি নিচে নামবেন। কারণ, তিনি চলে যাওয়ার পর কুকুরগুলিও ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে লাফিয়ে বাইরে বেরনোর চেষ্টা করবে। তখনই দুর্ঘটনার মুখে পড়বে তারা। এই যুক্তি উড়িয়ে দিতে পারেননি পুলিশ অফিসাররাও।
পুলিশ ও দমকল মিলে একে একে ১৪টি কুকুরকে বের করে নিয়ে আসেন। এর পর উদ্ধার করা হয় সন্তোষবাবুকে। বাড়িরই একটি অক্ষত অংশে দুজনের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। জোড়াসাঁকো থানার ওসি মুকুলরঞ্জন ঘোষের অনুরোধে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের একটি এনজিও কুকুরগুলিকে দেখভালের ব্যবস্থা করেছে। পুলিশকে সন্তোষবাবু জানিয়েছেন, রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনলেও কুকুরগুলি তাঁর বড় সঙ্গী। ফলে এদের ছাড়া তিনি থাকতে পারবেন না। বাড়ির ওই ধ্বংসস্তূপ সরানোর ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.