ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: কোমরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। নাতির পরিবারের সঙ্গে থেকেও মানসিক দিক থেকে নিঃসঙ্গ ছিলেন তিনি। সেই একাকীত্ব থেকে হতাশা, তার উপর বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন ৯০ বছরের বৃদ্ধা। শেষপর্যন্ত গায়ে আগুন দিয়েই আত্মহত্যা করলেন লক্ষ্মী মণ্ডল (৯০)। সোমবার ভোররাতে ফুলবাগানের এম এম রোডে ঘটল এই ঘটনা। বৃদ্ধার ১১ বছরের প্রপৌত্র শুনেছিল ১০০ ডায়াল করলেই আসে পুলিশ। সে-ই তার মায়ের ফোন থেকে ১০০ ডায়ালে ফোন করে। ওই বালকের তৎপরতায় কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। যদিও চিকিৎসা চলাকালীনই মৃত্যু হয় বৃদ্ধার।
পুলিশ জানিয়েছে, ফুলবাগানে একটি টালির ঘরে নাতি বাবুল মণ্ডলের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন ওই বৃদ্ধা। নাতি, নাতবউ ও ওই দম্পতির ছেলে থাকেন ঘরের ভিতর। ঠাকুরমার জায়গা ছিল বারান্দায়। বৃদ্ধার নাতবউ তপতী মণ্ডল জানান, তাঁরা তিনজনই ঘরের ভিতর ঘুমোচ্ছিলেন। ভোর তিনটে নাগাদ তাঁদের বৃদ্ধা ঠাকুরমা বাথরুমে যান। ফিরে এসে কাপড় পালটে নিজের শরীরে কেরোসিন তেল ঢালেন। তখন তাঁরা কিছু বুঝতেও পারেননি। দেশলাই দিয়ে গায়ে আগুন দেওয়ার পরই ধোঁয়ার গন্ধে তাঁরা ঘুম থেকে উঠে পড়েন। তখন সময় ভোর সাড়ে তিনটে। তাঁদের দরজার সামনেই গায়ে আগুন দেন বৃদ্ধা। ফলে আক্ষরিক অর্থে ঘরের ভিতর আটকেই পড়েন তাঁরা। বৃদ্ধার শরীর থেকে আগুনের ফুলকি ঘরের ভিতর আসতে শুরু করে। তাঁরা তিনজন মিলে চিৎকার করতে শুরু করেন। তাঁদের চিৎকার শুনেই প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। বৃদ্ধার শরীরে বালতি দিয়ে জল ঢালতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিভে যায়। কিন্তু যেভাবে তিনি পুড়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তখনই এগিয়ে আসে বাবুল ও তপতীর ১১ বছরের ছেলে। ওই বালক ১০০ ডায়ালে ফোন করে পুরো ঘটনাটি জানিয়ে পুলিশকে আসতে বলে। লালবাজারের নির্দেশে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে যায় ফুলবাগান থানার পুলিশ। পুলিশের গাড়ি করেই নিয়ে যাওয়া হয় এনআরএস হাসপাতালে। পরিবারের দাবি, হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পুলিশ ও চিকিৎসকদের বৃদ্ধা জানান, তাঁর কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা। তা তিনি সহ্য করতে না পেরেই গায়ে আগুন দেন। বৃদ্ধার চিকিৎসা চলছিল। সকালে মৃত্যু হয় তাঁর। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.