Advertisement
Advertisement
নার্স

স্তন্যদানে অপারগ মা, করোনাতঙ্ক উপেক্ষা করে স্তন্যপান করিয়ে সদ্যোজাতর কান্না থামালেন নার্স

শিশুর প্রথমবার স্তন্যপান না করতে পারার যন্ত্রণা মেটালেন নার্স।

Kolkata: Nurse breastfeeds non-lactating woman’s baby
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:June 2, 2020 2:16 pm
  • Updated:June 2, 2020 3:02 pm  

গৌতম ব্রহ্ম ও সুলয়া সিংহ: ‘মা না হলে বুঝবি না।’ মায়েদের কাছ থেকে এই বাক্যটি শুনে অভ্যস্ত প্রায় সব সন্তানই। সত্যিই মায়ের অনুভূতি যে
করোনাতঙ্ককেও বুড়ো আঙুল দেখাতে পরে, তা প্রমাণ করে দিলেন এক নার্স।

সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর স্তন থেকে দুধ নিঃসারিত না হওয়ায় স্তন্যদান করতে পারছিলেন না লেবার ওয়ার্ডে ভরতি এক মহিলা। এদিকে দুধের অভাবে চিৎকার করে কাঁদছে ঘ্ণ্টা তিনেকের সদ্যোজাত। মায়ের অসহায়তা দেখে আর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেননি আরেক মা। শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে স্তন্যপান করিয়ে তাঁর কান্না থামান আর জি কর হাসপাতালের নার্স উমা অধিকারী।

Advertisement

রোগীদের সেবাই তাঁর ধর্ম। করোনা আবহে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সে ধর্ম সযত্নে পালনও করে চলেছেন ঘাটালের মেয়ে উমা। তবে তিনি যে শুধুই নার্স নন, একজন মা-ও বটে, সেটাই বুঝিয়ে দিলেন। ঘটনা গত সপ্তাহের। আর জি করের লেবার ওয়ার্ড নাইট ডিউটিতে ছিলেন উমা। এক-একদিন এক-এক ওয়ার্ডে ডিউটি করতে হয়। বাড়িতে সাড়ে আট মাসের ছেলেকে রেখে এসে পিপিই-মাস্ক পরে রোগীদের দেখভাল করছিলেন অন্যান্যদিনের মতোই। সেখানেই ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর বড্ড অসহায় বোধ করতে থাকেন মহিলা। কারণ প্রসবের দু-তিন ঘণ্টা পরও স্তন থেকে দুধ নিঃসরণ হচ্ছিল না তাঁর। অথচ দুধ না পেয়ে কেঁদেই চলেছে সদ্যোজাত। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে মাদার-বেবি সেন্টারের শরণাপন্ন হন মা। কিন্তু করোনা আর লকডাউনের আবহে সেসব এখন কোথায়! অনেক সময় ওয়ার্ডের অন্যান্য মায়েরা এগিয়ে আসেন স্তন্যপান করাতে। কিন্তু করোনার ভয় সকলকে এমনভাবে গ্রাস করেছে, যে সদ্য মা হওয়া ওয়ার্ডের অন্যান্য মহিলারা এগিয়ে আসতে সাহস পাননি। পাছে সমস্যায় পড়ে নিজেদের সন্তান! তাহলে উপায়?

[আরও পড়ুন: হাওড়ায় রেলের অর্থোপেডিক হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা, আন্দোলনের হুমকি কর্মীদের]

সদ্যোজাতর কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে উমা নিজেই তাকে কোলে তুলে নেন। দু’বার স্তন্যপান করিয়ে শিশুর কান্না থামান তিনি। উমা বলছেন, “অনেক ক্ষেত্রে নিঃসরণ স্বাভাবিক করার জন্য সেই মা’কে মোটিভেট করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে বাচ্চা এত কাঁদছিল যে ওর কান্না থামাতে ওকে স্তন্যপান করালাম। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর শিশুটির মা স্তন্যদানে সক্ষম হয়ে গিয়েছিলেন।”

Nurse
ছেলের সঙ্গে নার্স উমা অধিকারী

উমা জানাচ্ছেন ঠিক সেই সময়ই বাড়ি থেকে ফোন এসেছিল। কিন্তু রোগীর সন্তানকে স্তন্যপানে ব্যস্ত থাকায় ফোনটাই ধরতে পারেননি। নার্সের কথায়, “রাত তখন প্রায় সাড়ে ১১টা। সাড়ে আট মাসের ছেলে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভিডিও কলে একবার আমার মুখটা দেখে। তাই স্বামী ভিডিও কল করছিল। কিন্তু ফোনটা কেটে দিই। স্বামীকে জানাই স্তন্যপান করাতে ব্যস্ত। কথাটা শুনে স্বামী একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন। আসলে আমাকেও তো বাড়ি গিয়ে নিজের সন্তানকে স্তন্যপান করাতে হয়।”

উমার সাহসকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন তাঁর সহকর্মী, বন্ধুবান্ধবরা। তবে উমা নির্বিকার। পিপিই পরে পরেরদিনের নতুন চ্যালেঞ্জের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ‘দশভূজা’ মায়ের যে আরও অনেক ওয়ার্ডে ডিউটি।

[আরও পড়ুন: করোনা সন্দেহে গ্রামে ঢুকতে বাধা, চিকিৎসায় দেরি হওয়ায় প্রাণ গেল জন্ডিস আক্রান্ত যুবকের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement