ছবি: প্রতীকী
কৃষ্ণকুমার দাস: আর্থিক সংকট থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে এবার অফিসার ও কর্মীদের ‘ওভারটাইম-ইনসেনটিভ’ বন্ধ হচ্ছে কলকাতা পুরসভায় (Kolkata Municipal Corporation)। শুধু তাই নয়, অবসরের পরেও যে সমস্ত অফিসার বা কর্মীর ‘অপরিহার্য’র অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে মোটা টাকা বেতন নিচ্ছেন তাঁদের অধিকাংশকে ‘বিদায়’ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে পুরভবনে। বস্তুত এই কারণে সোমবারই পুর কমিশনারকে ‘প্রাইস ওয়াটার’ ধাঁচের আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা সংস্থাকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য প্রশাসক ও পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। ওই সংস্থা পুরসভার সমস্ত বিভাগের অফিসার ও কর্মীদের এইচআরএ (হিউম্যান রিসোর্স একাউন্ট) সংক্রান্ত যাবতীয় খুঁটিনাটি সংগ্রহ করবে।
পরবর্তী আর্থিক বছর শুরুর আগেই কোন বিভাগে কত অতিরিক্ত অফিসার ও কর্মী আছেন তা যেমন চিহ্নিত করবে, তেমনই কেন পুরসভা ‘ওভারটাইম-ইনসেনটিভ’ দিতে বাধ্য হচ্ছে তাও জানিয়ে দেবে। পুরসভার এক শীর্ষকর্তাদের দাবি, “আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতার রিপোর্ট হাতে পেলে একদিকে যেমন খরচ অনেক কমানো যাবে, অন্যদিকে তেমনই নতুন কর্মী নিয়োগের দরজা খুলবে। চাকরি পাবে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন বহু নতুন ছেলে মেয়ে।” উল্লেখ্য, বর্তমানে কলকাতা পুরসভায় স্থায়ী ২০ হাজার ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার।
মাত্র তিনদিন আগেই ১৬১ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করার পাশাপাশি বেশ কয়েক মাস ধরে পুরসভার ঠিকাদারদের পাওনা মেটাতে পারছেন না পুরকর্তারা। কিন্তু করোনাকালে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ অফিসার ও কর্মী নিয়ে পুরসভার পরিষেবা দিয়ে দেখা গিয়েছে, নানা বিভাগে অতিরিক্ত অফিসার ও কর্মী রয়েছেন। আবার অনেক দফতরে চাহিদার তুলনায় মাত্র ২০/২৫ শতাংশ কর্মী আছেন। পুরসভার এক শীর্ষকর্তার শুধু অফিস সামলাতে জনা ২৫ কর্মী, অথচ একই পদমর্যাদার অন্য অফিসারের ঘরে মাত্র ৪জন ডিউটি করেন। কঠিন বর্জ্য বিভাগে এখন পাঁচজন ডেপুটি ম্যানেজার ও দু’জন ম্যানেজার রয়েছে। অ্যাসেসমেন্টের বিভিন্ন জোনে ম্যানেজার, ইনস্পেক্টর ও কর্মী সংখ্যার সামঞ্জস্য নেই। বস্তুত অতীন ঘোষ অ্যাসেসমেন্টের দায়িত্ব নিতে কিছুটা ছন্দে ফিরলেও কর্মীদের পোস্টিংয়ে এখনও সমন্বয় হয়নি বলে অভিযোগ।
আর্থিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে পুরভবনের অন্দরে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল, অবসর নেওয়ার পরেও বহু অফিসার প্রভাব খাটিয়ে মোটা টাকা বেতনে চুক্তিতে উচ্চপদে থেকে গিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে পুরসভার নানা বিভাগ ও দফতরে ‘ওভারটাইম-ইনসেনটিভ’ চালু রয়েছে। পুরঅফিসার ও কর্মীদের যোগসাজশে এই ওভারটাইম ও ইন্সেটিভ খাতে প্রতিমাসে পুরসভার কোষাগার থেকে কয়েক কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। স্বয়ং মুখ্য প্রশাসকের কথায়, “পুরকর্মীরা কেন আট ঘণ্টার মধ্যে নিজের কাজ শেষ করতে পারছেন না? অফিসারদের কাজে ও সমন্বয়ে কোথায় ঘাটতি থাকছে? পুরপরিষেবায় আরও গতি বৃদ্ধিতে ওভারটাইমের কি আদৌ প্রয়োজনীয়তা আছে? পরামর্শদাতা সংস্থা এসবই পুনঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবে।”
যে কাজের জন্য বেতন দেওয়া হচ্ছে তার জন্য কেন অতিরিক্ত অর্থ (উৎসাহভাতা বা ওভারটাইম) দেওয়া হবে তা মেয়র হয়েই তিন বছর আগে প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন ফিরহাদ। কিন্তু পুরসভার অন্দরে প্রশ্ন, সরাসরি পুরকমিশনার বিনোদ কুমার যদি ওই পরামর্শদাতা সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে রিপোর্ট তৈরি করান তবে তা হবে বাস্তবসম্মত তথ্য। কিন্তু যদি বিশেষ কমিশনার বা অন্য অফিসারের মাধ্যমে ওই পরামর্শদাতা সংস্থাকে পরিচালনা করেন তবে সেখানে সর্ষের মধ্যে ভূত থেকে যেতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.