কৃষ্ণকুমার দাস: মহানগরের বাতাসে অক্সিজেনের জোগান আরও বাড়িয়ে তুলতে এবার কলকাতা জুড়ে বসানো হচ্ছে নিম ও কাঁদুনে দেবদারু (উইপিং উইলো) গাছ। আপাতত ১ লক্ষ দেবদারু ও ৫০ হাজার নিমগাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা। বর্ষা শুরু হলেই রাস্তার ধার দিয়ে বিপুল সংখ্যায় এই বৃক্ষরোপণ শুরু হবে। এখানেই শেষ নয়, শহরের বাতাসের দূষণ কমাতে মহানগরের বিভিন্ন পার্ক ও রাস্তার সংযোগস্থলে বাষ্পীয় ফোয়ারা বসানো হবে। তৈরি করা হবে বিশেষ ধরনের জলের ধারাপ্রবাহ। কারণ, জলের এই প্রবাহ অনেক বেশি মাত্রায় বায়ুমণ্ডলের দূষণকে টেনে নেয়। বিশুদ্ধ হবে মহানগরের পরিবেশ।
কলকাতার মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “বড় গাছ রাস্তায় ঝড়ে ভেঙে পড়লে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। তাই, এবার কাঁদুনে দেবদারু (উইপিং উইলো) লাগানো হবে। বাতাসে আরও অক্সিজেন জোগান দেওয়ার জন্য প্রচুর সংখ্যায় নিমগাছও লাগানো হবে।” রাজস্থানের জয়পুর-যোধপুর থেকে শুরু করে হায়দরাবাদ, কোচি, পুণে শহর জুড়ে বিপুল সংখ্যায় নিমগাছ বসানোয় বাতাস পরিশুদ্ধকরণে সুফল পাওয়া গিয়েছে। বস্তুত, সেকথা মাথায় রেখে এবার জয়পুর-যোধপুরের ধাঁচে কলকাতার পার্ক ও রাস্তার পাশে কার্যত নিমের বাগান তৈরি করবে পুরসভা।
মহানগরে গত দশ বছরে যে হারে গাড়ি বেড়েছে, সে তুলনায় গাছ অনেক কম লাগানো হয়েছে। এছাড়াও কলকাতার চারপাশে দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি জুড়ে আবাসন প্রকল্প গড়তে গিয়ে প্রচুর সংখ্যায় সবুজ ধ্বংস হয়েছে। স্বভাবতই, লাগোয়া শহরতলি থেকে মহানগরে যে অক্সিজেনের জোগান আসত, তা আর আসছে না। উলটে বেশ কিছু ক্ষেত্রে তিলোত্তমার অক্সিজেন শুষে নিচ্ছে শহরতলির ঘনবসতি ঘেরা জনপদ। এখানেই শেষ নয়, যাদবপুর, কালিকাপুর থেকে শুরু করে ধাপা এলাকার একটা বড় অংশে যে জলাশয় ও ভেড়ি ছিল, তার অনেকটাই গত দশ বছরে ভরাট হয়ে গিয়েছে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, এই জলাশয় বাতাসে ভাসমান দূষণের কারণ কার্বন কণা-সহ সমস্ত দূষিত গ্যাস ও বায়বীয় রাসায়নিক সামগ্রী শুষে নিত। কিন্তু সেই জলাশয় না থাকায় প্রাকৃতিক নিয়মে বাতাস বিশুদ্ধকরণের যে চক্র কাজ করত তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই পূর্ব কলকাতার এই জলাশয়গুলি রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি ভরাট রুখতে রাজ্য সরকার সম্প্রতি খুবই কড়া আইন চালু করেছে। যাদবপুর ও ধাপা এলাকায় ভরাট বন্ধে নজরদারি শুরু করেছে পুরসভাও। কিন্তু সেখানেও এবার প্রচুর সংখ্যায় গাছ লাগানোর কর্মসূচি নিচ্ছে পুরসভা। তাই জলাশয়ের ঘাটতি পূরণে পার্কে বেশি সংখ্যায় বাষ্পীয় ফোয়ারা এবং লম্বা দেওয়ালজুড়ে জলের ধারাপ্রবাহ তৈরি করা হবে। কলকাতার রাস্তায় সৌন্দর্যায়নের কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে।
বড় রাস্তার মাঝে যেসমস্ত ডিভাইডার আছে সেগুলিতে এতদিন গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ লাগানো হচ্ছিল, এবার সেখানেও বেশি পাতা হয় এমন গাছ বসানো হবে। ইএম বাইপাসে রুবি হাসপাতাল থেকে পাটুলি পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে যেভাবে সবুজায়ন করা হয়েছে সেটিকে অনুকরণ করে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গাছ লাগানো হবে। মেয়র জানিয়েছেন, বনদপ্তরের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের অন্যান্য দপ্তরকেও এই গাছ লাগানোর কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হবে। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, অরণ্য সপ্তাহে শহরজুড়ে বিশেষ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নেওয়া হয়। এবছর মেয়রের নির্দেশে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে কলকাতার দূষণ প্রতিরোধে দেবদারু ও নিম গাছ লাগানো হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.