কৃষ্ণকুমার দাস ও শুভঙ্কর বোস: আগামী ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতা পুরসভার (Kolkata Municipal Corporation) স্থগিত নির্বাচন করা যেতে পারে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানিয়ে ‘হাতে সময়’ নিতে পারে রাজ্য সরকার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ রাজ্যের বাকি ১১০টি পুরসভার নির্বাচন কোনওমতেই বিধানসভা ভোটের আগে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। সুপ্রিম কোর্টে পুরভোট নিয়ে আগামী ১৭ ডিসেম্বর শুনানিতে এমনই অবস্থানের কথা জানাতে চলেছে রাজ্য সরকার। কোর্টের প্রশাসক বসিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি এড়াতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের আলোচনা শেষে সোমবার এমনই ‘মধ্যমপন্থা’র প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষকর্তা এদিন জানান, “করোনা অতিমারীর (Coronavirus) পরিস্থিতির ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে শুধুমাত্র কলকাতার ভোট করা যেতে পারে বলে হলফনামা দিয়ে জানানো হবে।” যদিও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) সরকারিভাবে জানিয়েছেন, “ শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না।”
কলকাতা পুরসভায় দ্রুত নির্বাচন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেছিলেন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা শরদ কুমার সিং। সেই মামলায় ১৭ ডিসেম্বর রাজ্যকে পুরসভার ভোটের নির্ঘন্ট জানাতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার সেই সময়সীমা উত্তীর্ণ হচ্ছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের (State Election Commission) শীর্ষ আধিকারিক রাতে জানিয়েছেন, “আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও যতদূর বুঝতে পারছি এখন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে। তাই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পর আরও ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ সময় হাতে রাখতে চায় রাজ্য সরকার। কিন্তু জেলার মেয়াদ উত্তীর্ণ বাকি পুরসভাগুলির ভোট নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না রাজ্য সরকার।” আসলে শহরে এখনই পুরভোট হোক চাইছেন পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম-সহ অধিকাংশ বিদায়ী কাউন্সিলর। এই সমস্ত কাউন্সিলররা পুনরায় জেতা নিয়ে ১০০ শতাংশ আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু কলকাতার অধিকাংশ বিধায়ক ও ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোররা চাইছেন না বিধানসভার আগে পুরভোট হোক। কিন্তু ভোটের নির্ঘন্ট না জানালে কোর্টই প্রশাসক বসিয়ে দেবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে। তাই শীর্ষ আদালতের কাছে এবার ‘মধ্যমপন্থা’র ফর্মূলা দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় পুরভোট করা যেতে পারে বলে জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এতে করে যেমন বিধানসভা ভোটের আগে চলতি প্রকল্পগুলি দ্রুত সম্পূর্ণ করার জন্য প্রশাসকমন্ডলী সময় পাবে, অন্যদিকে কোর্টের প্রশাসক এসে ‘নজরদারি’ করতে পারবে না। যদিও মধ্যমপন্থার প্রস্তাব সুপ্রিম কোর্ট কীভাবে নেবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছেন পুরসভার প্রশাসকমন্ডলী। যদি নিতান্ত কোর্ট রাজ্যের প্রস্তাব না মানে তখন রাজ্য সরকারই নিজেদের স্পেশাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট অফিসার বসিয়ে দেবে বলে ভাবনা রয়েছে নবান্নের।
রাজ্যের ১১০টি পুরসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ২২ হাজারেরও বেশি বুথের আয়োজন রাখতে হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সামগ্রীর বিপুল আয়োজন করতে হবে। এই মহামারী পরিস্থিতিতে যা করাটা কার্যত সম্ভব হবে না। তাছাড়া ভোটের খরচ পড়বে দ্বিগুণ। রাজ্য পুর দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, “নির্বাচন সংঘটিত করতে ইতিমধ্যেই ১৮৫ কোটি টাকা চেয়ে রেখেছে কমিশন। যা গত পুর ভোটের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তাছাড়া আগামী ৬ মাসের মধ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে। আমফান ও কোভিড পরিস্থিতির পর এমনিতেই রাজ্যের ভাড়ার ফাঁকা। ফলে এই পরিস্থিতিতে শুধু কলকাতা পুরসভা নির্বাচন করার কথা জানানো হবে হলফনামায়।” কমিশনের কথায়, ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে কোনও বোর্ডের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের মতো বড় পরীক্ষা জুন পর্যন্ত স্থগিত। এমনই যুক্তি ও তথ্য দিয়ে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা পুর নির্বাচন করার কথা বলা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.