অভিরূপ দাস: তার আসল বয়স ১ বছর ৯ মাস। পুর্নজন্ম পাওয়ার পর কেটেছে মোটে ১ বছর। যার ঔরসে জন্ম। তারই দেওয়া লিভারে নতুন জীবন পেয়েছে রিজওয়ান।
জন্মের পর থেকেই যকৃতের মারণ রোগে শয্যাশায়ী ছিল কলকাতার (Kolkata) একরত্তি। বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারত না। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতেই ধরা পরে অসুখ। বাইলারি আর্টেসিয়া। জন্মগত এই অসুখে লিভার পৌঁছে যায় শেষ পর্যায়ে। চিকিৎসকরা বলছেন, লিভারের এ অসুখকে এখন আর বিরল বলা চলে না। প্রতি ৮ হাজারে ১জন শিশু এখন এই অসুখে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাধারণত মল-মূত্রের রং দেখেই চেনা জানা যায় এই অসুখ। কিন্তু একদম ছোট বাচ্চার প্রস্রাবের রং অনেকেই ভাল করে ঠাওর করেন না। তাতেই বাধে গন্ডগোল। যেমনটা হয়েছিল রিজওয়ানের বেলাতেও। প্রস্রাবের রং স্বাভাবিকের তুলনায় অত্যধিক গাঢ়। মলের রং সাদা।
কেন এমনটা হয়?
বাইলারি আর্টেসিয়ায় শরীরে বাইল ডাক্ট সিস্টেম থাকে না, যার জন্যই লিভারের সমস্যা দেখা যায়। এই অসুখে গ্লাইকোজেন স্টোরেজ ডিজঅর্ডার দেখা যায়। ফলে লিভার, গ্লুকোজ ও গ্লাইকোজেন মেটাবলিজম পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যে কারণে অস্বাভাবিক পরিমাণে গ্লাইকোজেন তৈরি হয় শরীরে। লিভার বড় হয়ে গিয়েছিল রিজওয়ানের। এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসকদের টিম শিশুটিকে পরীক্ষা করে জানান লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। যে টিমে ছিলেন ডা. মহেশ গোয়েঙ্কা, ডা. রামদীপ রে, ডা. সুমিত গুলাটি। অস্ত্রোপচারের খরচ ছিল ২৩ লক্ষ। বিপুল এ টাকা জোগাড় করতে পারেনি রিজওয়ানের পরিবার। চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন, “হোক না অল্প টাকা। প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়াই আসল লক্ষ।” কিন্তু লিভার পাওয়া যাবে কোত্থেকে?
রিজওয়ানের মা এগিয়ে আসেন। “ছেলে তো আমারই একটা অংশ। ওর জন্য এটুকু করব না?” চোখের জল মোছেন মা রিনাবিবি। টানা ১৮ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার শেষে মায়ের লিভার বসেছে একরত্তির শরীরে। অস্ত্রোপচারের পর টানা ২৫ দিন শিশুটিকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। আপাতত সে সম্পূর্ণ সুস্থ। শুক্রবারই সেই অস্ত্রোপচারের একবছর। রিজওয়ানের মা যেদিনটাকেই ছেলের জন্মদিন হিসেবে পালন করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.