ফাইল চিত্র।
নব্যেন্দু হাজরা: কলকাতা মেট্রোয় (Kolkata Metro) ছবি বা ভিডিও তোলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এই অপরাধে দুষ্ট হলে সেই ব্যক্তির মোটা অঙ্কের জরিমানা এমনকী, জেল পর্যন্তও হতে পারে। ফলে এতদিন মেট্রোচত্বরে যাত্রীদের সেভাবে এই কাজে মত্ত হতে দেখা যায়নি। কিন্তু গঙ্গার তলা দিয়ে ছোটা মেট্রো যেন এসব নিয়মের বাইরে। প্রথমদিন থেকেই ইউটিউবারদের ভিড় সেখানে। এক শ্রেণির যাত্রীদের মধে্য রিলস বানানোর হিড়িকও নেহাত কম নয়। স্টেশন চত্বরেই শুয়ে বসে চলছে সেই কাজ। ব্যস্ত সময়ে প্রবল ভিড়েও ক্ষান্ত দিচ্ছেন না তঁারা। স্টেশনে ঢোকার গেট থেকে প্ল্যাটফর্ম, বা মেট্রোয় প্রবেশের আগে স্ক্রিনডোরের সামনে, মেট্রোয় কামরার ভিতর, এসকালেটর– কোনও অংশই বাদ যাচ্ছে না তঁাদের তালিকা থেকে। আর তঁাদের এই ভিডিও এবং রিলস বানানোর দৌরাত্মে্য রীতিমতো বিরক্ত নিত্যযাত্রীরা। তঁাদের কথায়, মানুষ এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াতের জন্য মেট্রোয় চড়েন। অথচ একশ্রেণির ছেলেমেয়ে নতুন মেট্রোকে শুধু ছবি আর ভিডিও করার জন্য বেছে নিয়েছেন। অনেকে তো একবার টিকিট কেটে একাধিকবার যাতায়াত করছেন শুধু ভিডিও করার জন্য।
যাত্রীদের বক্তব্য, হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড মেট্রোটা যেন বহু মানুষের কাছে জয়রাইড হয়ে দঁাড়িয়েছে। সবাই এখানে ভিডিও করতে ব্যস্ত। গঙ্গার তলায় মেট্রো ঢোকার মুহূর্তে তো কথাই নেই, হুমড়ি খেয়ে গেটের কাছে আসেন সবাই। দরজায় সামনে জায়গা না পেলে বসে থাকা যাত্রীদের কার্যত ঘাড়ের উপর উঠে ভিডিওয় ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে ইউটিউবারদের। বিষয়টি নজরে এসেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষেরও। তঁারা জানিয়েছে, নতুন একটা জিনিস তৈরি হয়েছে। দেশের মধে্য প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো। মানুষের উৎসাহ দেখে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটা এবার বন্ধ করা দরকার। নয়তো সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। বহু অভিযোগও পাচ্ছেন স্টেশনে দঁাড়ানো রেলপুলিশ এবং মেট্রো কর্তারা। তাই এই লাইনেও এরপর ভিডিও বা রিলস করতে দেখলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কর্তৃপক্ষের তরফে।
যাত্রী পরিষেবা শুরুর দিন থেকেই হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড গঙ্গার নিচ দিয়ে ছোটা মেট্রো নিয়ে মানুষের উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। বহু যাত্রী বাস ছেড়ে মেট্রোয় চড়ে অফিস যাচ্ছেন। সকাল এবং সন্ধের দিকে তো উপচে পড়ছে ভিড়। কিন্তু নিত্যযাত্রীদের বিড়ম্বনা তৈরি করছেন এই ইউটিউবাররা। গঙ্গার নিচে যখন মেট্রো ঢুকছে, তখন দেখা যাচ্ছে নীল আলোয় তা মোড়া। গঙ্গা বোঝানোর জন্যই মেট্রোর তরফে এই সিদ্ধান্ত। সেই দৃশে্যর ভিডিও করতেই সব থেকে বেশি উৎসাহ ইউটিউবারদের। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে উঠছে ছবি। যাত্রীদের মধে্য অনেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাতের বালাই নেই এই সব মোবাইলধারীদের। নিত্যযাত্রীদের কথায়, এরা নিজেদের ভিডিওতে ভিউ আর লাইক বাড়ানোর জন্য যা পারছে, করছে। মেট্রোটা কি রিলস বানানো জায়গা! এত বছর ধরেও তো লোকে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় চড়ে আসছেন, ওখানে তো কখনও ভিডিও তৈরির, ছবি তোলার উৎসাহ দেখা যায় না। কর্তৃপক্ষ একটু কড়া হলেই এটা বন্ধ করা যাবে।
মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘দেশের মধে্য প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো নিয়ে মানুষের আগ্রহ রয়েছে। অনেকেই এই রিলস, ভিডিও বানাচ্ছেন মেট্রো চত্বরে। বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। প্রথম প্রথম ছাড় দেওয়া হলেও এবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.