সুব্রত বিশ্বাস: বড়দিন। সাহেবি কেতাদুরস্ত সড়ক পার্ক স্ট্রিট। দিনটা উপভোগ করতে সেখানে যেতেই হবে। যেখানে যেতে মূল ভরসা কলকাতা মেট্রো। ফলে ওই দিন ভিড় উপচে পড়বে মেট্রো রেলে। ভিড়ের যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব করতে ওই দিন বেশি সংখ্যায় মেট্রো চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সাধারণ দিনে ১৭৪টি ট্রেন চললেও ওই দিন মেট্রো চলবে ১৮৮টি। বাড়তি ট্রেনের পাশাপাশি বাড়তি নিরাপত্তায় মোড়া হবে এসপ্ল্যানেড, ময়দান ও পার্ক স্ট্রিটকে।
[ক্যালকাটা ওয়্যার চিটফান্ডে তল্লাশি, শাহজাহানের খোঁজে সিবিআই]
মেট্রো রেলের আরপিএফের সিনিয়র কমান্ড্যান্ট মহম্মদ মনোয়ার খান জানান, বড়দিনে ওই তিনটি স্টেশনে যাত্রী ভিড় উপচে পড়ে। নিরাপত্তায় বাড়তি আরপিএফের সঙ্গে থাকবে বাড়তি কমান্ডো। ভিড়ে নজরদারি রাখতে ও মহিলাদের সুরক্ষা দিতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। যারা ভিড়েও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারবে। সশস্ত্র বাহিনীও গেটগুলি ও মেট্রোর লাইনে নজর রাখবে। ভিড়ে নজরদারি থাকলেও আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরিকাঠামোর চূড়ান্ত অভাব রয়েছে মেট্রো রেলে। বহু স্টেশনে স্ক্যানার খারাপ দীর্ঘ দিন ধরে। ফলে যাত্রীর সঙ্গে থাকা ব্যাগে কী ঢুকছে তাই জানতে পারেন না সুরক্ষা কর্মীরা। তাই কলকাতা মেট্রোর সুরক্ষা ব্যবস্থা যে যথাযথ নয় তা স্পষ্ট যাত্রীদের কাছে। মনোয়ার খান অবশ্য আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন, স্ক্যানারের জন্য টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। এদিকে মেট্রোয় সিসিটিভি থাকলেও তাতে অস্বাভাবিক কিছু যাচ্ছে কি না, তাও যেমন খতিয়ে দেখা হয় না, তেমনি সুরক্ষার প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আরপিএফের কোনওরকম নির্ধারিত মিটিং হয় না। কোনও ঘটনা ঘটলে যে দায়সারা গোছের মিটিং হয় তা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে জানা গিয়েছে। এমনই নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দৈনিক সাত লক্ষ যাত্রীকে চড়তে হচ্ছে কলকাতা মেট্রোয়। নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে বাড়তি পাওনা ‘হয়রানি’।
যাত্রীদের কথায়, চলমান সিঁড়ি অধিকাংশ সময় খারাপ থাকে বিভিন্ন স্টেশনে। বিকল এসি, বিলম্বিত ট্রেন এত নিত্যদিনের ঘটনা। এর উপর বাড়তি হয়রানি, স্মার্ট কার্ডের চরম অভাব। টোকেন সমস্যায় লাইনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা। টাকা দিয়েও এই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। মেট্রো কর্মীরা এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেছেন, স্মার্ট কার্ডের জোগান নেই। নতুন কিছু কার্ড এসেছিল তা এতটাই পলকা যা দু’মাসও যায় না। খারাপ হচ্ছে। ভেঙে যাচ্ছে। যাত্রীরা ব্যবহৃত যে স্মার্ট কার্ড ফেরত দিয়েছেন তা এতটাই বিবর্ণ যে যাত্রীরা তা নিতে চাইছেন না। মেট্রোর সিওএম স্টেশনগুলিতে ফোন করে ওই কার্ডই বিক্রি করতে বলেছেন। যাত্রীরা পুরনো কার্ড কিনেও সমস্যার মধ্যে পড়ছেন বলে অভিযোগ। বাড়তি দশ শতাংশ রেলের ঘরে জমা রেখে ৬০ টাকা দিয়ে এই কার্ড কিনে সমস্যায় ভুগছেন যাত্রীরা। কার্ড খারাপ হলে, আবেদনের ছ’দিন বাদে কার্ড মেলে। এও এক সমস্যা।
[সৈকত শহরের অন্য পরিচয়, দিঘাকে নিয়ে তৈরি হল থিম সং]
কর্মীরা টোকেনের সমস্যার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁদের কথায়, টোকেন অপর্যাপ্ত। কোনও কোনও স্টেশনে বেশি যাত্রী যাত্রা বিরতি করছেন। ফলে সেখানে বেশি টোকেন জমা হচ্ছে। কোনও স্টেশনে বেশি যাত্রী চড়ছেন। ফলে বেশি টোকেন বিক্রি হচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে পারছে না এই টোকেন। বিক্রি হচ্ছে, জমা পড়ছে টোকেনের এই চক্রাবর্তে রীতিমতো ঘুরপাক খেতে হচ্ছে সিটিআই কর্মীদের। টোকেন সংগ্রহের পর মেশিন থেকে ৮০-৯০টি করে বের করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী তা অন্য স্টেশনে সাপ্লাই দেওয়া হয়। দেওয়া-নেওয়ার এই প্রথা ম্যানুয়ালি হওয়ায় তা এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যেতে বিলম্ব হচ্ছে। বহু সময় যাত্রীদের লাইনে অপেক্ষা করে থাকতেও হচ্ছে। বছরের শেষ ও নতুন বছর শুরুর দিনগুলিতে ভিড়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই সমস্যা বাড়বে এ সম্পর্কে একেবারে নিশ্চিত কর্মীরা। মেট্রো কর্মীদের অভিযোগ, মেট্রোতে কর্মী সংখ্যা কম। ক্লিনিং স্টাফদের দিয়ে টিকিট বিক্রি করানো হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি বুকিং কাউন্টারে চলছে এই অব্যবস্থা। বুকিং ক্লার্কদের জায়গায় বেআইনিভাবে এই কর্মী লাগানোয় ক্ষুব্ধ ক্লিনিং স্টাফরাও। তাঁদের কথায়, বেকায়দায় পড়লে ঊর্ধ্বতনরাই তাঁদের চাকরি খাবে। এই কর্মীদের পোশাক এক হলেও কাঁধে ব্ল্যাক রিবন থাকে না। ২৪টি স্টেশনেই স্টেশন পোর্টার নেই। ফলে স্টেশন মাস্টারদেরই করতে হচ্ছে পোর্টারের দায়িত্ব পালন। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী এক জায়গা থেকে কর্মীদের সরিয়ে অন্যত্র লাগানো হচ্ছে।
[নজরদারির অভাবে চরিত্র বদল চড়ুইভাতির, দূষণের কবলে পিকনিক স্পটগুলি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.